হিট প্রকল্প থেকে ছিটকে পড়া কয়েকজন আপিল ছাড়াই ফের প্রেজেন্টেশনের সুযোগ পাচ্ছেন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৮ PM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১০:২০ PM
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্প থেকে ছিটকে পড়া কয়েকজনকে ফের প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আপিল আবেদনের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নতুন করে প্রেজেন্টেশনের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। যা নিয়ে বঞ্চিতদের একটি অংশ অভিযোগ তুললেও ইউজিসির বলছে, এটি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নয়; বরং বোর্ডের পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুসারেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে ভাইভা নেওয়ার সঙ্গে আপিলের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি ইউজিসির।
জানা যায়, প্রকল্প প্রস্তাবনা মূল্যায়নে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে জানায়, যেসব প্রস্তাবনা বাছাই পর্বে বাদ পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্টরা আপিলের সুযোগ পাবেন। ইউজিসি-বিএটিএফ অপারেশন ম্যানুয়ালের ৪.৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়। তবে আপিলের শেষ সময়ের আগেই আগের ধাপে প্রেজেন্টেশন থেকে বাদ পড়েছিলেন, এমন কয়েকজনকে পুনরায় প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপনের (প্রেজেন্টেশন) সুযোগ দিতে ডাকা হয়েছে। ২১ আগস্ট তাদের প্রেজেন্টেশন গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান-এর স্বাক্ষর করা ১৭ আগস্ট ইস্যুকৃত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘...কার্যক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইউজিসি-বিএটিএফ’র ৬ষ্ঠ সভায় এটিএফ অপারেশন্স ম্যানুয়াল (ATFOM)-এর অনুচ্ছেদ ... অনুযায়ী Window-3a এর অধীন ... Discipline-এর জন্য ১ম পর্বের জন্য বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় আপনার দাখিলকৃত প্রস্তাবনার Presentation পুনরায় গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায়, আপনার দাখিলকৃত প্রস্তাবনার উপর ১০ (দশ) মিনিটের উপস্থাপনা (Presentation) আগামী ২১/০৮/২০২৫ তারিখ ...... ঘটিকায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, আগারগাঁও, ঢাকা-এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত তারিখ ও সময়ে SPM ও ASPM-1 কে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে উপস্থাপন করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
এমন চিঠিতে পুনরা প্রেজেন্টেশনের ডাক পাওয়া অন্তত তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর কথা হয়েছে; যারা জানিয়েছেন, তারা আপিল করেননি। ইউজিসি থেকেই তাদেরকে ফোন করে পুনরায় প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাকা হয়েছে। ভাইভা থেকে প্রথমবার বাদ পড়ার পর আপিল ছাড়াই কোন ক্রাইটেরিয়ার, কীভাবে দ্বিতীয়বার প্রেজেন্টেশনের সুযোগ পাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি দুজন। পাশাপাশি প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তারা। তবে অন্যজন জানিয়েছেন, এটা ইউজিসি ভালো বলতে পারবে; তারা কেন আবার প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাকল।
প্রথম ধাপে বাদ পড়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাকে ইউজিসি থেকে ফোন করা হয় এবং বলা হয়, আপনাদের প্রস্তাবনাটি পুনরায় প্রেজেন্টেশনের জন্য আগামী ২১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। কাল (২১ আগস্ট) আমাদের প্রেজেন্টেশন রয়েছে।’
‘বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি সেকশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অবশিষ্ট অর্থ বরাদ্দে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অনেক আগের সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে আপিল আবেদনের কোন সম্পর্ক নেই। আপিলের বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গেই সম্পন্ন করা হবে।’—অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান, প্রকল্প পরিচালক, হিট
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোশ্যাল সায়েন্স, আর্টস ও হিউম্যানিটিজ সেকশনের বরাদ্দকৃত অর্থ অবশিষ্ট থাকায় অর্থ বরাদ্দ দিতে পুনরায় প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য ডাকা হয়েছে। এটা সম্পর্কিত আগের সিদ্ধান্তের একটি অংশ। এছাড়া বঞ্চিতদের আপত্তি থাকলে আপিলের জন্য যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেটির সঙ্গে এর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি সেকশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অবশিষ্ট অর্থ বরাদ্দে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অনেক আগের সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে আপিল আবেদনের কোন সম্পর্ক নেই। আপিলের বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গেই সম্পন্ন করা হবে।’ জানা গেছে, নতুন করে ডাক পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা দশ জনের বেশি; যদিও এই তথ্য পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আপিলের আবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজনকে পুনরায় প্রকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ডাকা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, যেহেতু এখনো আপিল করার সময় রয়েছে, সেহেতু নিয়মমাফিক আপিল গ্রহণের পর তা যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু এর আগে কাউকে ডেকে পুনরায় প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হলে তা আপিল প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করবে।
তার যুক্তি, প্রকল্পের প্রথম ধাপে যারা নির্বাচিত হননি, তাদেরকে ‘অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থানে পরিবর্তন এনে পুনরায় সুযোগ দেওয়া প্রকল্পের মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থ্যাৎ ফের প্রেজেন্টেশন নেওয়ার মাধ্যমে ইউজিসি ‘অযোগ্যদেরকে’ ‘যোগ্য’ বানানোর চেষ্টা করছে; যা বেমানান। বঞ্চিত হওয়া আরেক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ‘উইন্ডো ৩এ-তে একইসঙ্গে প্রেজেন্টেশন দিয়ে দুজন বাদ পড়লাম। এখন আমার কলিগ পুনরায় প্রেজেন্টেশনের ডাক পেলেন, কিন্তু আমি পেলাম না। ঠিক কোন ক্রাইটেরিয়ায় তিনি পুনরায় সুযোগ পাচ্ছেন এবং আমি পাচ্ছি না, তা বোধগম্য নয়। তার দাবি, যদি অর্থ অবশিষ্ট থাকে এবং বরাদ্দে নতুন সুযোগ তৈরি হয়; তবে সেটা সকল আবেদনকারীর জন্য উন্মুক্ত করা উচিত— যোগ করেন এই শিক্ষক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপিলের জন্য আবেদন করেছি আমরা। কিন্তু আপিলই হলো না, এরই মধ্যে অনেককে পুনরায় প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাকা হলো। এটি আসলে কোন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে আমার জানা নেই। সেই সঙ্গে এই প্রক্রিয়াটিও আমার কাছে অস্বচ্ছ মনে হচ্ছে।’