মস্তিস্কের শক্তি বাড়ানোর সেরা ৭ উপায়
- অনির্বান গোস্বামী
- প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২, ১১:৫৭ AM , আপডেট: ২০ জুন ২০২২, ১২:৪৭ PM
মস্তিষ্কের শক্তি মানুষের বড় হাতিয়ার। কেননা এ শক্তির উপর ভর করেই মানুষ বিশ্ব জগৎ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ফলে কেউ মহাকাশ জয় করছে, কেউ হচ্ছে কোটি টাকার মালিক, এমনকি কেউ করছে বিশ্ব শাসন। আবার অনেকে মাধ্যমিকের পদার্থবিদ্যায় পাশ করতে না পেরে মহাকাশ গবেষণার স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। কেউ গণিত শাস্ত্রে ভালো দখল রাখতে না পেরে ব্যবসা ছাড়ছে। এমনকি বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে স্মৃতিশক্তি। অল্পতেই ভুলে যাচ্ছে অনেক কিছু।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সকলেরই থাকে অনেক প্রচেষ্টা। বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও অল্প বয়সে এর প্রভাব অস্বাভাবিক। তবে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন; কোন দূর্ঘটনা, জেনেটিক কোন সমস্যা কিংবা বিশেষ কোন রোগের কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। তবে স্মৃতিশক্তি বাড়ার উপায় কী? চলুন জেনে নেই মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর উপায়-
১) পর্যাপ্ত ঘুমনোর অভ্যাস করা। কেননা রাতে ভালো ঘুম ছাড়া কাজে গভীর মনোনিবেশ সম্ভব নয়। আর গভীর মনোনিবেশন ছাড়া কোন কাজে মস্তিষ্কের পুরোপুরি অংশগ্রহণ ব্যহত হয়। ফলে সেই জিনিস স্মৃতিতে কম সময় স্থায়ী হয়। তাই গবেষকরা বলছেন, শরীর ও মনের সঠিক পুনরুজ্জীবনের জন্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু সেটা দেরিতে ঘুমিয়ে দুপুরে উঠা নয়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে, তাড়াতাড়ি উঠা। ফলে দিনের বেলা কাজের পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে। কোন কাজের চাপ না থাকায় মস্তিষ্ক শান্ত্ থাকে। ফলে যেকোন বিষয় সহজে স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়। তাছাড়া মস্তিষ্কে চাপ বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
আরও পড়ুন: পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়
২) স্বাস্থ্যকর খাবার মস্তিষ্কের জন্য উপকারি। খাবারের ২০% শর্করা এবং শক্তি মস্তিষ্কে যায়। গ্লুকোজের মাত্রার উপর মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নির্ভর করে। ফলে দেহে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে মন ও মস্তিষ্কের উপরও প্রভাব পড়ে। কেননা কোন পছন্দের খাবার খেলে মস্তিষ্কের সংবেদন সীমানায় ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মন উৎফুল্ল থাকে এবং কাজে একাগ্রতা বাড়ে। তাই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া মস্তিষ্কের কোষ ফ্যাট তথা স্নেহ পদার্থ দিয়ে গঠিত। তাই শারীরিক অবস্থা ভেদে বাদাম, তেলের বীজ, মাছ ইত্যাদি গ্রহণ করা মস্তিষ্কের জন্য ভাল।
৩) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস জরুরি। কেননা দৈহিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতায় শরীরচর্চা বেশ কার্যকরী। শরীরচর্চার ফলে মেটাবলিজম বাড়ে। এমনকি মস্তিষ্কে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করার পাশাপাশি মেজাজ স্বাভাবিক রাখে। ফলে মস্তিষ্কের শক্তির উন্নতি ঘটে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: ১০টি টিপস আপনার চাকরি নিশ্চিত করতে পারে
৪) বইপোকা হয়ে উঠুন। খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, সাময়িকী, কথাসাহিত্য, নন-ফিকশন পড়ুন। শুধু তাই নয়, চোখের সামনে যা পড়ে, তাই একটু নেড়েচেড়ে দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অনলাইনে নতুন কিছু দেখতে পেয়েছেন, তাহলে দেরি না করে একনজরে পড়ে ফেলুন। নিজের জানার আগ্রহ বৃদ্ধি করুন। এটা আপনার দিগন্তকে প্রসারিত করবে। এমনকি আপনার বুদ্ধিমত্তা ও দ্রুত উপলব্ধির ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। সর্বোপরি আপনার মস্তিষ্ক শক্তিশালী হবে।
৫) ধাঁধা অনুশীলন মস্তিষ্কের উন্নতিতে বেশ কার্যকরী। বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন সমাধান এবং বিভিন্ন ধাঁধার গেম মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে এবং নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে সহায়তা করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক হয়।
৬) অবসর মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। কারণ কর্টিসল নামক এক হরমোন দেহ-মন উৎফুল্ল রাখার পাশাপাশি কাজে মনোযোগ বাড়ায়। কিন্তু অধিক চাপে এ হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। তাই দীর্ঘ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মস্তিষ্কের জন্য খুবই খারাপ। তাই কাজের মাঝে কিছুসময় অবসর দিলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তাছাড়া এসময় যোগব্যায়াম কিংবা মাইন্ডফুলনেস চর্চার বেশ কার্যকরী। এগুলো দেহের স্ট্রেস হরমোন কমাতে সহায়ক।
৭) ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক দু’আ ও যিকর মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। কারণ যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনিই তো সফলতা কিংবা বিফলতা দানকারী। তিনি চাইলে সবই সম্ভব। তাই তাঁর স্বরণের মাধ্যমেই আমাদের প্রভূত কল্যাণ নিহিত। পবিত্র কোরানে সূরা ত্বা-হা ১১৪ আয়াতে আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, “হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। ”
যিকর বা আল্লাহর স্মরণ বিপদে কিংবা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। সূরা আল-কাহ্ফ এর ২৪ তম আয়াতে আল্লাহ বলেন, “…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…।”
আরও পড়ুন: ‘বড় বড় স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবেন না’
তাই মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে বেশি বেশি যিকর তথা তাসবীহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার)- এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।