রাবি ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে যে পরামর্শ আইন বিভাগের তাওহীদের
উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছেন দেশসেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এসময় অনেকেই আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বেও ভোগেন; এজন্য তারা থাকেন হতাশায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে একজন শিক্ষার্থীর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে কী কী করা উচিত, সে সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিট ৩৫তম হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তাওহীদ ইকবাল নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। বিস্তারিত তুলে ধরছেন মারুফ হোসেন মিশন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রাবিতে চান্স পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে পড়েছেন, দৈনন্দিন রুটিন কী ছিল?
মো. তাওহীদ ইকবাল: যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো একটা ফলপ্রসূ রুটিন তৈরি করা ও সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নেওয়া। রাবিতে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আমারও একটা দৈনন্দিন রুটিন ছিল। রুটিনে অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোকে পাশে রেখে দৈনিক ৭/৮ ঘন্টার একটা মেইন টাইমফ্রেম ছিল পড়াশোনা করার। যদিও যার যার সুবিধা মতো রুটিন তৈরি করতে হবে। তবে আমার ক্ষেত্রে আমি এই সময়টাকে তিনভাগে ভাগ করে বাংলা, ইংরেজি ও জিকের জন্য প্রিপারেশন নিতাম। এর মধ্যে ইংরেজির জন্য দুই চতুর্থাংশ সময়, বাংলা ও জিকের জন্য এক চতুর্থাংশ করে সময় ভাগ করে নিয়েছিলাম নিজের সুবিধা মতো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষা সফলতা পাওয়ার কোনো সহজ টেকনিক আছে কি?
মো. তাওহীদ ইকবাল: কোনো সফলতারই সহজ ও শর্টকাট টেকনিক নেই। নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়, দৃঢ়তা, ধারাবাহিকতা, ধৈর্য ও সততার সাথে লেগে থাকলে যেকোনো সফলতাই আসবে ইনশাআল্লাহ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষায় কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই তারা কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে?
মো. তাওহীদ ইকবাল: ভর্তি পরীক্ষায় কোচিং খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও না আবার একেবারে গুরুত্বহীনও না। আমি নিজে একজন ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট ছিলাম। কোনো চাপ ছাড়া নিজে নিজে পড়তে পারতাম না। নিজের পড়া নিজে গোছাতে পারতাম না। তাই আমি কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রতিদিন কোচিংয়ের পড়া কাভার করতে হবে, ক্লাসটেস্ট দিতে হবে এসবের জন্য বাধ্য হয়েই সবসময় পড়াশোনার মধ্যে থাকতাম। তবে কারো যদি নিজের উপর আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকে, নিজের পড়া নিজেই গুছিয়ে পড়তে পারে তাহলে কোচিংয়ের খুব একটা প্রয়োজন নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গাইডবই না কি পাঠ্যবই—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
মো. তাওহীদ ইকবাল: অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের গুরুত্ব সবার আগে। তবে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গাইডবুকও অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে বাংলা প্রথমপত্রের জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র, নবম-দশম শ্রেণির (পুরাতন সিলেবাস) বাংলা দ্বিতীয়পত্রের বোর্ডবই, ইংলিশ ফর টুডে, জিকের জন্য উচ্চমাধ্যমিকের পৌরনীতি ও সুশাসন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ভূগোল এগুলোর গুরুত্ব সবার আগে। একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে কোনো একটি নির্দিষ্ট গাইডবইয়ের উপর একচ্ছত্র ও একমাত্র ভরসা করা যাবে না। প্রস্তুতি নিতে হবে সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চ মাধ্যমিকের পর করণীয় কী?
মো. তাওহীদ ইকবাল: উচ্চ মাধ্যমিকের পরে যেহেতু একেকজনের একেকরকম ইচ্ছে বা স্বপ্ন থাকে সেহেতু করণীয়ও এখানে বিভিন্নরকম। যার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, সে মেডিক্যাল অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নিবে। যার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তুতি নিবে এবং যাদের স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ইউনিটের প্রস্তুতি নিবে। আবার যাদের স্বপ্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে বিদেশে গমন, তাদের আইইএলটিএস বা জিআরই-এর প্রিপারেশন নেওয়া।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেক শিক্ষার্থীকে একইসাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। যারা একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নেয়, তাদের জন্য পরামর্শ কী?
মো. তাওহীদ ইকবাল: একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নেওয়ার একটা সুবিধা হলো মোটামুটি প্রস্তুতি থাকলেও একটা না একটাতে চান্স হয়ে যায়। আর ভালো প্রস্তুতি থাকলে সব ইউনিটেই চান্স পাওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সুবিধাও যেমন আছে তেমনই ঝুঁকিও বেশি। কারণ তখন বিভিন্ন ইউনিটের জন্য অনেক সাবজেক্ট পড়তে হয় এবং সময়ও অনেক ব্যয় হয়। এজন্য টেকনিক্যালি সময় ও রুটিন মেইনটেইন করাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণকালে সাধারণত কোন ভুলগুলো শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দেয়?
মো. তাওহীদ ইকবাল: হতাশা, হাল ছেড়ে দেওয়া, সিলেবাস কাভার না করা, রিভিশন না দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, শুধুই কোচিং নির্ভর পড়াশোনা করে নিজে না পড়া ইত্যাদি। কোনোভাবেই ডিমোটিভেট হওয়া চলবে না। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরীক্ষা চলাকালীন ১ ঘন্টা/দেড় ঘন্টায় কোন ভুল করা উচিত নয়?
মো. তাওহীদ ইকবাল: পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে যাওয়া একদমই উচিত না। এই সময় ঠান্ডা মাথায়, খুব মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নের কোয়ালিটি কঠিন হলে সেটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু আপনার একার জন্য কঠিন না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রাবি ভর্তি পরীক্ষায় আপনার অবস্থান কত ছিল?
মো. তাওহীদ ইকবাল: আমি ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেখানে আমার অবস্থান ছিল ৩৫তম। বর্তমানে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়ন করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার এই সফলতার পেছনের গল্প কী?
মো. তাওহীদ ইকবাল: সর্বপ্রথম আল্লাহর দয়া, বাবা-মায়ের দোয়া আর আমার নিরন্তর প্রচেষ্টা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি এখন রাবি শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস লাইফ কেমন উপভোগ করছেন?
মো. তাওহীদ ইকবাল: আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপার্টমেন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করছি।
মো. তাওহীদ ইকবাল: আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা।