সমাবর্তনে শূণ্যে টুপি ছোড়ার রীতি এল যেভাবে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৯ AM , আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৭ PM
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি মেলে শিক্ষার্থীদের। সমাবর্তনের মাধ্যমে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয় শিক্ষার্থীরা। তাই এই দিনে তাঁরা বিশেষ পোশাক পরে হাজির হন। পরনে থাকে কালো গাউন, হুড আর চার কোনা টুপি।
এই সমাবর্তনে গিয়ে আনন্দের আতিশয্যে টুপি ছুড়ে উল্লাস করবেন এমন ইচ্ছা স্বাভাবিক। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের একটি অতি প্রচলিত রেওয়াজ- সবাই মিলে একসাথে তাদের গ্র্যাজুয়েশনের টুপি শূণ্যে ছুড়ে মারা। কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এর পেছনে আসল কারণ কী?
সমাবর্তনে গাউন পরার রেওয়াজ মধ্যযুগ থেকে চালু হলেও টুপি ছোড়া চালু করে আমেরিকা। ১৯১২ সালে আমেরিকান নেভাল একাডেমি প্রথম সমাবর্তন টুপি আকাশে নিক্ষেপ করা শুরু করে। প্রথম এই ঐতিহ্যের প্রচলন ঘটে ঠিক যে বছর ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক জাহাজ। তাই অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা জন্মে গিয়েছে যে, টাইটানিক ট্র্যাজেডিতে মৃতদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেই হয়ত সেদিনের গ্র্যাজুয়েটরা আকাশপানে ছুড়ে মেরেছিল তাদের টুপিগুলো। আসলে বিষয়টি তেমন কিছুই ছিল না।
এর কারণ হলো, আমেরিকান নেভাল একাডেমিতে পূর্ণাঙ্গ অফিসার হওয়ার আগে নৌবাহিনীর গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম দুই বছর মিডশিপম্যান হিসেবে কাজ করতে হতো। যখন মিডশিপম্যানরা স্নাতক হন, তখন অফিসারদের কাছে একটি নতুন টুপি দেওয়া হতো। সে সময় তাঁরা তাঁদের পুরোনো টুপিগুলো আকাশে উড়িয়ে দিতেন। সেই থেকেই এটি ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, যা আজকে উচ্ছ্বাসের প্রতীক হয়ে বিশ্বজুড়ে সব শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
গোটা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আপনাদের আগে জানা থাকা লাগবে উনিশ শতকের শেষ ভাগে এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে ইউএস নেভিতে ব্যবহৃত পদবীগুলো সম্পর্কে।
১৮৮৩ পর্যন্ত র্যাংক: যারা নেভাল একাডেমিতে পড়াশোনা করেছে অর্থাৎ নেভাল একাডেমির শিক্ষার্থী যারা নেভাল একাডেমিতে পড়াশোনা করেছে + দুই বছর 'সি সার্ভিস' এ কাজ করেছে = নেভাল ক্যাডেট
নেভাল ক্যাডেল + 'এনসাইন' হিসেবে নিয়োগের অপেক্ষায় আছে = জুনিয়র এনসাইন।
১৮৮৪ সালে এনসাইন হিসেবে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা পদটি বাতিল করা হয়, এবং জুনিয়র এনসাইনদের শুধু এনসাইনের পদমর্যাদা দেয়া হয়। জুনিয়র এনসাইনরা যে লেইস পরত, তা এবার নেভাল ক্যাডেটরা পরতে শুরু করে। ১৯০২ সালে এসে নেভাল ক্যাডেটদেরকে 'মিডশিপম্যান' বলে ডাকা শুরু হয়।
১৯১২ সালে দুই বছর ধরে 'সি সার্ভিস' করার পদটি বাতিল করা হয় এবং নেভাল একাডেমিতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদেরকেই 'মিডশিপম্যান'-এর মর্যাদা প্রদান করা হয়। বর্তমানেও শিক্ষার্থীদেরকেই 'মিডশিপম্যান' বলা হয় আর এর পরের পদমর্যাদাই হলো 'এনসাইন'।
১৯১২ সালে যখন 'সি সার্ভিস' পদমর্যাদাটির বিলুপ্তি ঘটল, শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নতুন পদবীসহ নতুন টুপি প্রদান করা হলো। ইতিপূর্বে তাদেরকে পূর্বতন পদমর্যাদার টুপি সংরক্ষণ করে রাখতে হতো এবং পরবর্তীতে সি সার্ভিসে গিয়ে সেটি পরতে হতো। কিন্তু সি সার্ভিসই যখন আর থাকল না, তখন ওই পুরনো টুপিগুলোর প্রয়োজনীয়তাও ফুরোল।
সেজন্য ১৯১২ সালে অনুষ্ঠিত সেই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তারা তাদের পুরনো টুপিগুলো শূন্যে ছুঁড়ে মারল, এবং পরে আর সেগুলোকে সংগ্রহেরও প্রয়োজন বোধ করল না। তবে কেউ কেউ করল কী, টুপির ভিতর সামান্য কিছু টাকা আর তাদের নাম-ঠিকানাও লিখে রাখল। তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরাও একই রীতি মেনে চলতে থাকে, এবং কালের বিবর্তনে এক পর্যায়ে এটিই পরিণত হয় একটি ঐতিহ্যে।
তবে এখানে মজার বিষয় হলো, ১৯১২ সালে নেভাল একাডেমির শিক্ষার্থীরা শূণ্যে টুপি ছুড়ে মেরে তাদের পুরনো পদবীকে বিদায় জানালেও, এখনকার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা শূন্যে টুপি ছুঁড়ে মেরে আসলে নতুন প্রাপ্ত কোনো না কোনো পদবীকে অভ্যর্থনা জানায়।