অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান © সংগৃহীত
বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে ১ কোটি লোকের চাকরি দেওয়ার পরিকল্পনা থাকবে উল্লেখ করে দলটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, তরুণদের প্রধান চাহিদা হচ্ছে কর্মসংস্থান। আমাদের এমন এক পরিকল্পনা নিতে হবে যা তরুণদের শুধু চাকরির পেছনে নয় বরং উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নিয়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের একটা টার্গেট আছে বিএনপি সরকারে আসলে আমরা এক বছরে এক কোটি লোককে চাকরি দেব। সেটা মুখে বললেই তো হবে না। তার জন্য আমরা একটা অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসহ সব ধরনের একটা পরিকল্পনা আমরা করেছি। সেটা আমরা জাতির সামনে নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা তুলে ধরব।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাব-এ সেমিনারের আয়োজন করে।
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই যেখানে কারিগরি ভোকেশনাল ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা সো-কলড মাস্টার্স হায়ার ডিগ্রি খুব বেশি আমরা করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি যেটা আমাদের ভোকেশনাল, কারিগরি, প্রযুক্তি নির্ভর আমাদের এই কম্পিটিটিভ গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। টিকে থাকতে হবে। সেই জিনিসগুলো আজকে আমরা আমাদের শিক্ষকরা এবং তোমরা যারা আমাদের ছাত্ররা এসেছো (সেমিনারে) তোমরা আজকে তোমাদের আলোচনাগুলোতে তোমাদের মতামত ও অপিনিয়ন দেবা। সেটার ভিত্তিতে আমরা একটা সামারি করব।
তিনি বলেন, শিক্ষা কেবল একটা সার্টিফিকেট নয়। এটা চিন্তার মুক্তিও মানবিক বিকাশের আসলে ধরে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে ছাত্ররা গণতন্ত্র নৈতিকতা ও নেতৃত্বের শিক্ষা পাবে। কারণ নেতৃত্ব তৈরি না হলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যায়।
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, কার্ল মার্কস বলেছিলেন, শিক্ষা সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ শিক্ষাকে বানিয়েছে শোষণের অস্ত্র। আজ আমাদের শিক্ষায় নেই। কোন নৈতিকতা নেই মূল্যবোধ শুধু পাশ করাটাই যেন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলাফল ভূরি ভূরি পাস অথচ ভূরি ভূরি বেকার। তাহলে প্রশ্ন আছে এই শিক্ষার উদ্দেশ্য আসলে কি?
‘এই কারণেই আমি বলতে চাই বিএনপির ৩১ দফায় পঞ্চম দফায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক পথিতযশা শিক্ষাবিদ পেশা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদে উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা হবে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশের মেধার শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই আমি প্রশ্ন রাখছি আপনারা কি চান।’
তিনি বলেন, একটি বেকারত্ব জর্জরিত দেশ নাকি মেধাবীদের হাতে পুরোপুরি পরিচালিত একটি উন্নত দেশ। বিএনপির ৩১ দফার ২২তম দফায় বলা হয়েছে যুব সমাজের ভীষণ চিন্তা আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষিত বেকারদের জন্য এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। আই রিপিট শিক্ষিত বেকারদের জন্য এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এটা আমরা ৩১ দফায় নিয়ে আসছি। এটা আমাদের একটা কমিটমেন্ট। কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জনের লক্ষ্য বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হবে।
‘এই তরুণ বান্ধব রাজনীতি যেখানে প্রতিটি তরুণের স্বপ্নের সঙ্গে রাষ্ট্রের দায়িত্ব জড়িত, বিএনপি বিশ্বাস করে একজন বেকার তরুণকে মানসিকভাবে শক্তিশালী গড়ে তোলা করা সম্ভব। আজ তারেক রহমান তার গুরুদৃষ্টি জ্ঞান ও দেশপ্রেম দিয়ে সেই পরিবর্তনের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে চিন্তাকে কর্মে এবং প্রতিবাদকে নীতিতে রূপ দেয়া যায়। সবাই আস্থা রাখুন আমরা সেই ২৪-এর প্রতিবাদ নীতিতে রূপান্তর করব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিএনপির প্রতিশ্রুতি তরুণ প্রজন্মের আগামীর অগ্রযাত্রার পাথেও হবে। আর শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানে নিয়ে আসবে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।’
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ প্রমুখ।