দৃশ্যমান কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন

দৃশমান কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন
দৃশমান কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন  © ফাইল ছবি

শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের ছুটি থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন আন্দোলনের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষকরা নেতারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা তাদের নিয়মিত এক ঘণ্টা কর্মবিরতিও আপতত স্থগিত রেখেছেন। তবে আন্দোলন থেমে নেই। প্রতিনিয়তই শিক্ষক নেতারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। গত ১ জুলাই চালু হওয়া প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে ওঠা শিক্ষকদের আপত্তিগুলো খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেও। আবার আন্দোলনকারী শিক্ষকেরাও এসব যুক্তি মানছেন না।

এদিকে, গত ১৩ জুলাই (শনিবার) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি শিক্ষকদের এ নেতা।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি ছিল। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সবগুলো প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই। ইতিপূর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। সবার মতো তারাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে যোগ দেবেন, এটা তাদের পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে।

তবে বৈঠকের পর আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবির আন্দোলন স্থগিত হয়নি। বরং পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অপরিবর্তিত রয়েছে।

শিক্ষকদের দিন দফা দাবি হলো- সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা।

গত ৩০ জুন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। সেই ঘোষণার পর ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। তবে কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে সহিংসতার মধ্যে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রভাব দেখা গেছে শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনে।

শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর ২ জুলাই সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি পেনশনে ‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট’ পদ্ধতির পেনশন-ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, যার ব্যয় বাজেট থেকে মেটানো হয়। এ পদ্ধতির পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বাড়ছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই ব্যবস্থা নয়। এখন চালু করা হয়েছে ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট’ পদ্ধতির পেনশন ব্যবস্থা। এর আওতায় ধীরে ধীরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও শিক্ষকদের এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, প্রত্যয় শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, ৪০৩টি সংস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ওপর কার্যকর হবে। শিক্ষকেরা শ্রদ্ধেয় মানুষ। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন তারা করতেই পারেন। তবে বেশিরভাগ সংস্থায় যেহেতু পেনশন ব্যবস্থাই ছিল না, ফলে তাদের জন্য এটা একটা ভালো উদ্যোগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আমাদের দাবি নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। এগুলো আলোচনার বিষয়। আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। কিন্তু এখন যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, তাই আমাদের ক্যাম্পাসে এক ঘণ্টার যে অবস্থান কর্মসূচি সেটা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে আন্দোলন থেমে নেই, আলোচনাও অব্যাহত আছে। 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়। তবে আমাদের আন্দোলন থেমে নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে নিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।


সর্বশেষ সংবাদ