৯ দিনে ৭৫ লাখ শিক্ষাঘণ্টা হারাল ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকদের কর্মবিরতি
শিক্ষকদের কর্মবিরতি  © ফাইল ছবি

সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে অচল হয়ে পড়েছে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১ জুলাই থেকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত টানা ৯দিন যাবত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার ফলে প্রয়োজনীয় শিক্ষাঘণ্টা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের ঘোষণা, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন না।

ইউজিসির তথ্যমতে, দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ২৯৮ জন। গত জুন মাসে ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে জুলাই থেকে ক্যাম্পাসগুলো চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ক্লাস এবং পরীক্ষায় বসতে পারেনি বিশাল সংখ্যক এ শিক্ষার্থীরা। 

গত ১ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত দিনপ্রতি এক ঘণ্টা সময় হিসেবে গড়ে ৩টি ক্লাস করে ৯ দিনে মোট ২১টি ক্লাস বা ২১ শিক্ষাঘণ্টা হারিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে হিসেবে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ লাখ ৮০ হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬ শিক্ষাঘণ্টা হারিয়েছেন।

এছাড়াও ঈদের পর অনেক বিভাগের মিডটার্ম এবং ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখনো শুরু হয়নি। ফলে সেশনজটে পরার আশঙ্কা করছেন অনেক শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনুভা বলেন, ঈদের পর আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় একধরণের মানসিক অস্থিরতা কাজ করছে এবং সেই সাথে সেশনজটে পরার শঙ্কা হচ্ছে। 

পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় একজন অধ্যাপক মাসে ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পেনশন পান। এ জন্য তাদের বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না। সর্বজনীন পেনশন নিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন ব্যবস্থায় ৩০ বছর বয়সে যোগ দিয়ে ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিলে মাসে মাসে বেতন থেকে টাকা কাটার পর পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা।

কিন্তু আনুতোষিক বা গ্রাচ্যুইটি বাবদ এককালীন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নতুন ব্যবস্থায় পাওয়া যাবে না। এই টাকা পেনশন তহবিল বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা যোগ করলে বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন দাঁড়ায় মাসে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এখানে সুবিধা কমার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকনেতারা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ১ জুলাই থেকে যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে।

আন্দোলন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, সরকারের ভেতরে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অপমান করার জন্য পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি হাজির করেছে। কিন্তু আমরা বর্তমান সরকারের পক্ষেই সব সময় কথা বলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলের আমাদের দাবি মেনে নেবে।

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের এ অচলাবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন করছি না বরং প্রত্যয় নামক বৈষম্যমূলক স্কিমের বিরুদ্ধে করছি। অর্থ মন্ত্রণালয় এই স্কিম প্রণয়ন করে শিক্ষকদের জিম্মি করেছে। তাই শিক্ষক সমাজ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ দায় নেবে না। এর দায় অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। আমরা চাই অতিদ্রুত এ সমস্যার সমাধান হোক।  


সর্বশেষ সংবাদ