হিজাব বির্তক

প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে চেহারা মিলিয়ে দেখা পেশাগত দায়িত্বের অংশ: ঢাবি শিক্ষক সমিতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি  © লোগো

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) হিজাব বির্তকে সৃষ্ট ঘটনার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’। একই সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) সময় প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে শিক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখা একাডেমিক ও পেশাগত দায়িত্বের অংশ বলে মনে করছে শিক্ষক সমিতি।

সমিতি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ভাইভা ও অন্যান্য একাডেমিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার অপতৎপরতার একটি অংশ।

গতকাল শনিবার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রবিবার গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঠানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান একাডেমিক কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ভাইভা ও অন্যান্য একাডেমিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক হলেও এ বিষয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার যে অপতৎপরতা চলছে, সে বিষয়ে শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। 

“মনে রাখতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করে এবং একই সাথে শিক্ষকদের একাডেমিক স্বাধীনতাকেও মূল্য দেয়। একাডেমিক নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনো পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর ‘পরিচয়’ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ছবির সাথে শিক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখতে হয়, যা শিক্ষকদের একাডেমিক ও পেশাগত দায়িত্বের অংশ। আর এরূপ দায়িত্ব পালনে শিক্ষকদের অসহযোগিতা তথা মুখমণ্ডল দেখাতে অস্বীকৃতি জানানো পরোক্ষভাবে একাডেমিক রীতিনীতিকেই অস্বীকার করার শামিল। এক্ষেত্রে কোনো কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে, যা কাম্য নয় ৷”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে একই ইস্যু সৃষ্টি করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মহামান্য আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমের সময় মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখার পক্ষে রায় প্রদান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে ধারণ করে, এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও পোশাক-পরিচ্ছদের স্বাধীনতা রয়েছে। অপরদিকে একাডেমিক কার্যক্রমেরও বিশেষ বিধিবিধান রয়েছে। মনে রাখতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধৰ্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য আলাদা কোনো একাডেমিক নীতিমালা সম্ভব নয়।

“অতএব সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ একাডেমিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর এক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যাখ্যা করে শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাদানকারী বা এ সম্পর্কে অপপ্রচারকারী; যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চায় এবং অরাজকতা সৃষ্টি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও গৌরব নষ্ট করতে চায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জোর দাবি জানাবে।”


সর্বশেষ সংবাদ