শূন্য থেকে বিসিএস ক্যাডার পবিপ্রবির মোরশেদ, পড়েছেন দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা
- আমান উল্যাহ আলভী
- প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৬ PM , আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০০ PM
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার তিমিরকাটি গ্রামের ছেলে মোরশেদ আলম নাইম। তবে বাবার চাকরির সুবাদে নাইমের শৈশব কেটেছে পটুয়াখালীতে। স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) বিভাগ থেকে ২০১৩-১৪ সেশনে অনার্স শেষ করেন তিনি।
এরপর অনার্স শেষ করে প্রয়াত বাবার ইচ্ছে পূরণে শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। সে স্বপ্ন পূরণও হয়েছে তার। ৪৩তম বিসিএসে ভেটেরিনারি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন নাইম। মেধাক্রম-৬। তিনি এখন বর্তমানে কর্মরত আছেন সোনালি ব্যাংকের অফিসার পদে।
মোরশেদ আলম নাইম বলেন, সাফল্যের অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যায় না। আলহামদুলিল্লাহ, আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। রেজাল্টের পর যখন মাকে ফোন দিয়ে ক্যাডার হওয়ার সংবাদটি দিলাম—সে অনুভূতিটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সাপোর্ট ও দোয়া ছাড়া আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হতো না।
তার বাবা মো. মোবাশ্বের আলী হাওলাদার ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। মা নাজমিন নাহার একজন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মোরশেদ দ্বিতীয়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে মোরশেদকে। ভর্তি পরীক্ষার সময় পবিপ্রবি ছাড়াও আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও বাবার ইচ্ছেতে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ভর্তি হন তিনি।
মোরশেদ জানান, বাবার ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষে বিসিএস দিয়ে বাবা ও ছেলে একই উপজেলায় চাকরি করবো। এখান থেকেই মূলত আমার বিসিএসের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। এ যাত্রায় আমার বড় বোন, দুলা ভাই, ছোট বোন আমাকে যতটা সাপোর্ট করেছে তা বলে শেষ করা অসম্ভব।
মোরশেদের এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিলো না। ৪১তম বিসিএসে প্রিলি-রিটেন শেষ করে ভাইভা দিয়েও খালি হাতে ফিরেছেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। ৪৩তম বিসিএসকে টার্গেট করে ফের শুরু করেন প্রস্তুতি। এবার আর ব্যর্থতা নয়, পেয়েছেন সাফল্য। ৪৩তম ছাড়াও তিনি ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রিটেনের রেজাল্টের অপেক্ষায় আছেন এবং ৪৫তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছেন।
২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে নিজের স্বপ্ন পূরণে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন মোরশেদ। তিনি বলেন, প্রথম দিকে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই করোনা মহামারির জন্য সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘরবন্দি হয়ে নিজ কৌশলে লিখিত ও ভাইভার জন্য প্রস্তুত শুরু করি।
মোরশেদ বলেন, প্রিলিমিনারির জন্য আমি প্রথমে ব্যাখ্যাসহ বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলো শেষ করি। এরপর বিভিন্ন বিষয়ের বোর্ড বইগুলো পড়া শেষ করি। সবশেষে প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি করে গাইড বই পড়ি। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস বিসিএস প্রস্তুতিতে আমাকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে।
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে মোরশেদ বলেন, বিসিএসে সফল হতে হলে নিজের প্রতি আস্থা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক আগে থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও বিভিন্ন সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। বন্ধু, বড়ভাই ও ছোট ভাইদের সাথে আড্ডা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে একেবারে শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করে নিজেকে সফল করতে পেরেছি। অনিয়মিতভাবে পড়াশোনা করে বিসিএসে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই প্রতিদিনই পড়াশোনা করতে হবে।
মোরশেদের বিসিএসে প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার। এছাড়াও তালিকায় ছিল পুলিশ, কাস্টমস, কর ক্যাডার। তিনি বলেন, বিসিএসের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে অন্য কোনো না কোনো চাকরি হবেই ইনশাআল্লাহ। আমি নিজেও শুধু বিসিএস কেন্দ্রিক প্রস্তুতি নিয়েও দুটি সরকারি ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। তাই চাকরি প্রত্যাশীদের বলবো, বিসিএসের জন্যই দৃঢ়ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। আমি প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে নিজ মেধা ও শ্রমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই।