ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হল কমিটি নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার চার নেতা
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার চার নেতা  © টিডিসি ফটো

পছন্দের প্রার্থীদের নেতা বানাতে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হল শাখার কমিটি গঠনের পরপরই এমন অভিযোগ করেন অন্য প্রার্থীরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। তারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনস্থ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোটের মাধ্যমে হল শাখার কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের আব্দুর রহিম রনি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ২০১০-২০১১ সেশনের তরিকুল ইসলাম তরিক। ভোট বর্জন করেছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন ও হলের সভাপতি প্রার্থী নাহিদুজ্জামান শিপন।

এ ঘটনায় হল কমিটির প্রতি অনাস্থা এনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বাকী পদপ্রত্যাশীরা একটি অভিযোগপত্র দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ১৩ জন। তারা হলেন— নাহিদুজ্জামান শিপন, নাছির উদ্দিন শাওন, রাজু আহম্মেদ, হাসান আবিদুর রেজা বায়েজিদ, মোহাম্মদ আল আমীন, কাওছার সরকার, সুলতান মো. সালাউদ্দিন সিদ্দিক, জুবায়ের আহমেদ, ইমন হোসেন, রেদোয়ান মাহেদী জয়, সাকিব হোসেন, আফসার তারিক, ইয়াসিন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নেতা বানানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিলো সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হল ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। তবে সেসময় এস এম হলের কমিটি গঠন করেনি নেতারা। অন্য হল কমিটি গঠনের প্রায় দুই বছর পরে এস এম হলের কমিটি গঠন করলো সংগঠনটি। এই কমিটি গঠন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান নিজেরাও ভোটে অংশ নিয়েছেন। যদিও উপজেলা মর্যাদার ইউনিটে নেতা বানাতে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের ভোট দেওয়ার নজির নেই। তবুও যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নেতা বানাতে এই ভোটাভুটিতে অংশ নেয় তারা।

আরও পড়ুন- তিন মাসের কমিটিতে ২ বছর পার

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বিগত হল সংসদ নির্বাচনে জিএস ও এজিএস পদে যারা নির্বাচন করেছিলো তারা প্রার্থী হলেও তাদেরকে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সভাপতি পদপ্রার্থী নাহিদুজ্জামান শিপন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মধুর ক্যান্টিনে হল কমিটি ভোটের মাধ্যমে করা হবে বলে জানানো হয়। ওইসময় কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা ভোটার হবেন বলে জানানো হয়। তখন আমরা এর বিরোধিতা করি। সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। বলা হয়েছিল অন্য ১২টি হলে যেভাবে কমিটি হয়েছে সেভাবেই হবে। কিন্তু আমাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ হঠাৎ করে একটি অবৈধ ভোট প্রক্রিয়া সকলের উপর চাপিয়ে দেয়। নিজেদের পকেটম্যানকে নেতা বানাতে গিয়ে একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত হল সংসদ নির্বাচনে হলের ভিপি প্রার্থী ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। শীর্ষ নেতারা যদি আমাকে যোগ্য মনে না করেন তবে অন্য আরও কয়েকজন যোগ্য প্রার্থী ছিলো। তাদেরকেও নেতা বানানো হয় নি। এটা তারা গায়ের জোরে করেছে। আমি এই প্রক্রিয়া বর্জন করে সেখান থেকে চলে আসি।

আরেক প্রার্থী নাছির উদ্দিন শাওন বলেন, আমাকে জোর করে ভোট দেওয়ানো হয়েছে। আমিসহ ছয় জন প্রার্থী ছিলাম। আমরা বুঝতে পারিনি তারা এরকম করবে। তারা আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অগণতান্ত্রিকভাবে ভোট নিয়েছে। আমরা এই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মানি না।

অপর প্রার্থী রাজু আহম্মেদ বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে হুমকি দিয়ে আমাদেরকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন- এক দশক রাজনীতি করেও ছাত্রদলে পদহীন ওরা

এদিকে কমিটির সভাপতিকে নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে হল শাখার সদ্য সাবেক আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস হোসেন বলেন, সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম হলে থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। তরিকুল ইসলাম ২০১২ সালে ছাত্রলীগের হয়ে আমাকে ব্যাপক মারধর করলে আমি আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আমার সার্বিক খোঁজ খবর নেন ও দেখতে আসেন।ছাত্রলীগের হয়ে ক্যাডার রাজনীতি করা এমন একজনকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত ভোটের মাধ্যমে কমিটিতে আনায় আমি মর্মাহত। এই হলের অনেক যোগ্য প্রার্থী ছিলো যাদের সাথে অবিচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। কমিটি গঠনের পর অনেকে অভিযোগ করেছেন। এখন বিষয়টি যেহেতু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে তাই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।  

সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, এখানে কোন প্রকার অসঙ্গতি করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারা ছিল। আমরা ছিলাম। যা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদের নির্দেশনায় হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলকে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি তারা।

উল্লেখ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি।


সর্বশেষ সংবাদ