সোচ্চারের জরিপ
চাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদেই এগিয়ে ছাত্রশিবির
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৩ PM
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে 'সোচ্চার' পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের বড় একটি অংশ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও ভিপি, জিএস ও এজিএস— তিন পদেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে আছেন।
গত ৮ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৮০৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪১ শতাংশ নারী, ১৩ শতাংশ অমুসলিম এবং ৪ শতাংশ অবাঙালি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক, ২৯ শতাংশ অনাবাসিক যারা ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকেন এবং ২৫ শতাংশ শহরে বসবাস করে শাটল ট্রেনে যাতায়াত করেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এবার ভোট প্রদান করবেন। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন— প্যানেল দেখে নয়, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী এমন প্রার্থীকে প্রাধান্য দেবেন যিনি একই সঙ্গে ভালো ছাত্র ও ভালো অ্যাক্টিভিস্ট।
আরও পড়ুন: রাকসু নির্বাচনের ভিপি-জিএসসহ শীর্ষ তিন পদেই এগিয়ে ছাত্রশিবির
জরিপে দেখা যায়, ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী ইব্রাহিম রনি প্রাথমিকভাবে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। ছাত্রদলের প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট, আর ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার এখনো মতামত দেননি। ভোট দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারদের মধ্যে পুরুষদের ৫১ শতাংশ ও নারীদের ৭২ শতাংশ। গবেষক দলের প্রেডিকশন অনুযায়ী, সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের ভোট যোগ হলে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী মোট ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারেন, যেখানে ছাত্রদল প্রার্থী পাবেন ২২ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে জিএস পদেও ছাত্রশিবিরের প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব এগিয়ে আছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ২৭.৬% ভোট পেয়েছেন, ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন পেয়েছেন ৬% এবং স্বতন্ত্র প্যানেলের রশিদ দিনার পেয়েছেন ৪.৫%। ৫১% ভোটার এখনো মত দেননি। সিদ্ধান্তহীনদের ভোট যোগ করলে শিবির প্রার্থী মোট ৫১.৩%, ছাত্রদল ১৭.৪% এবং অন্যান্যরা বাকিটা পাবে।
এদিকে এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের সাজ্জাদ হোসেন মুন্না প্রাথমিকভাবে ১৪.২% ভোটে এগিয়ে আছেন। সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের ভোট যোগ করলে তার প্রাপ্ত ভোটের হার দাঁড়াবে ৪০.৮%। ছাত্রদলের প্রার্থী তৌফিক ২৮.০৪% ভোট পেতে পারেন বলে প্রেডিকশন করা হয়েছে।
জরিপে আরও দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা চাকসু প্রতিনিধিদের কাছে যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তার মধ্যে রয়েছে— আবাসন ও পরিবহন সংকটের সমাধান, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সততা ও স্বচ্ছতাপূর্ণ স্টুডেন্ট ফোকাস চাকসু গঠন, খাবারের মান বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক সংস্কার (সেশনজট নিরসন, শিক্ষক মূল্যায়ন, লাইব্রেরি সংস্কার, রেজিস্ট্রার ভবনের সেবার ডিজিটালাইজেশন)।
আরও পড়ুন: হামজা চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘দিনশেষে একটু হতাশা রয়েই গেল’
জরিপ অনুযায়ী ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেসব গুণকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তা হলো— ব্যক্তিত্ব, সততা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, ভালো বক্তা হওয়া, প্রগতিশীল মনোভাব, ধার্মিকতা এবং জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা। বিপরীতে ব্যক্তিত্বহীনতা, মাদকাসক্তি, যৌন কেলেঙ্কারি, ধর্মবিদ্বেষ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মিথ্যাচার ও নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলে প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, ৫৯% শিক্ষার্থী মনে করেন চাকসু নির্বাচনে ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচনের প্রভাব পড়বে। ১৯% শিক্ষার্থী নিজেদের নির্যাতনের শিকার বলে উল্লেখ করেছেন, আর ৪৫% শিক্ষার্থী অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন। তবে ৫৩% শিক্ষার্থী বিশ্বাস করেন, নির্বাচিত চাকসু প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে সক্ষম হবেন।