সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে ঢাকা কলেজ, শঙ্কা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি

প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা কলেজ উচ্চমাধ্যমিক অংশের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থ পরিপন্থী অথবা বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোর পরিবর্তন হলে না মানার ঘোষণা দেন তারা। এসময় তারা ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ প্রকাশের দাবি জানান। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নুরুজ ছাফা লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা হলে ঢাকা কলেজ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা হবেনা বলে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করছেন। কিন্তু আমরা এতে আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ তাদের কথার কোন আইনি ভিত্তি নাই। আমরা আশঙ্কা করছি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে আমাদের স্বার্থ পরিপন্থী নীতিমালা থাকতে পারে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই যে বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোর কোন পরিবর্তন বা সংকোচন যা উচ্চমাধ্যমিককে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটি ঢাকা কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। 

তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামে সাত কলেজকে একীভূত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে বলে আমরা অবগত হয়েছি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে উচ্চমাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ কি হবে এ বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং এখনো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি আরও জানান, গতকাল ২১শে সেপ্টেম্বর আমরা ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে মাননীয় চেয়ারম্যান এবং ইউজিসির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করি। শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিলো অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা। কিন্তু তারা এটির ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতার কথা বলেন এবং জানান এটি তাদের এখতিয়ারবহির্ভুত। এসময় পাঁচটি উদ্বেগের কথা জানান তারা। 

ঢাকা কলেজ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উদ্বেগসমূহ হলো:

১) ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ‘স্কুল অফ সাইন্স' প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে স্কুল অফ সাইন্স প্রতিষ্ঠিত হলে স্নাতকের শিক্ষার্থীদের সাথে ঢাকা কলেজ নামক প্রতিষ্ঠানের কোন সংযোগ থাকছে না। এমতাবস্থায় তারা ক্যাম্পাসের মূল ফটকের নামফলকে ঢাকা কলেজ সরিয়ে ঢাকেবি লেখার দাবি করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা বলেই ধরা যায়; কিন্তু এটি ঢাকা কলেজের অস্থিত্বের পরিপন্থী। আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

২) আমাদের জানানো হয়েছে টাইম শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। সকাল ৮.০০টা থেকে দুপুর ১২.০০ টা পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস চলবে এবং তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু এটি আদৌও বাস্তবসম্মত কিনা এবং ভবিষ্যতে এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে তারা উচ্চমাধ্যমিক বিলুপ্তের দাবি জানাতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৩) একই ক্যাম্পাসে দুইটি কাঠামো সমস্যাজনক একটি বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনৈতিক কার্যক্রম উচ্চমাধ্যমিকের একাডেমিক পরিবেশ ব্যাহত করতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন।

৪) কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে কোন কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন হবে তা স্পষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন স্থানে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমরা রাজি না। আমরা এবিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

৫) স্কুল অফ সাইন্স প্রতিষ্ঠিত হলে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করবে এবং ঢাকা কলেজের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য সংকটে পড়বে। আমরা নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান জানাই। কিন্তু শুধুমাত্র ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য রক্ষার জায়গা থেকে আমরা এ বিষয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ