ডাকসুতে ভালো করার নিয়ামক আন্দোলন-সংগ্রামের সাফল্য, কতটা এগিয়ে বৈষম্যবিরোধীরা
- সোহেল রানা
- প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৮ PM , আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ PM
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে আগ্রহ ও আলোচনা— কারা পাবেন ডাকসুর নেতৃত্বের দায়িত্ব। ডাকসুর অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতা অর্জন করা নেতারাই পান ডাকসুর নেতৃত্ব।
ডাকসুর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ছাত্রদল ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে জয় পায়। নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে মোট তিনটি প্যানেল অংশ নেয়। প্যানেল তিনটি হলো ‘দুদু-রিপন’, ‘রিপন-আমান’ এবং ‘আমান-খোকন’। নির্বাচনে ৭ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আমান উল্লাহ আমান, ৭ হাজার ১৯১ ভোট পেয়ে জিএস পদে খাইরুল কবীর খোকন এবং ৭ হাজার ৮১ ভোট পেয়ে এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন আলম।
২০১৮ সালের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, ওই সময়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ভোট কারচুপি, পেশিশক্তির ব্যবহার, ভোটদানে বাধা দেবার অভিযোগ থাকলেও ভিপি পদে জয় লাভ করেছিলেন নুরুল হক নুর। তার প্যানেল থেকে সমাজসেবা সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছিলেন আখতার হোসেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন নুর। যার প্রতিফলন ঘটে ডাকসু নির্বাচনে।
এদিকে ২০২৪ সালে কোটা পদ্ধতি পুনরায় বহাল করার প্রতিবাদে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন ঘটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের। তবে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে এই প্লাটফর্ম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা জোটে না গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি প্যানেল হলো— বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল। এতে ভিপি পদে আবদুল কাদের, জিএস পদে মো. আবু বাকের মজুমদার ও এজিএস পদে আশরেফা খাতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা তিনজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।
অন্যদিকে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন তিনি। তার প্যানেলে জিএস পদে লড়বেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া আর এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন জাহেদ আহমদ।
এছাড়া, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক মো. জামাল উদ্দীন খালিদ, জিএস পদে মাহিন সরকার (এনসিপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত) এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফাতেহা শারমিন এ্যানি।
বাগছাস নেতা আবু বাকের মজুমদার বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলাম। আমরা আশাবাদী ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
উমামা ও তার প্যানেলের প্রার্থীরা মনে করছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকাই তাদের শক্তি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান। এ কারণে তারা এই প্যানেলকে ভোট দেবেন।
‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী জামাল উদ্দিন খালিদ বলেন, অনেক যোগ্য প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি স্বতন্ত্র প্যানেল গঠন করেছি। আমাদের প্যানেলে যারা এসেছেন তারা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকেই ২৪এর জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা এবং আহত আছেন কয়েকজন। আমরা আশা করি ভালো কিছু করতে পারব।