জুলাইয়ের প্রথম দিনেও মিছিলের সামনে ছিলেন আবু সাঈদ

১ জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ
১ জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ  © টিডিসি

২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করলেই এক তরুণের মুখ ভেসে ওঠে—নাম আবু সাঈদ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিলেন জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই।

তবে আন্দোলন যত বেগবান হতে শুরু করে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ততই জ্বলে উঠতে থাকেন। সর্বশেষ এ আন্দোলনে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে স্ফুলিঙ্গ ধরিয়ে দেন রংপুরের এই সাহসী তরুণ।

গত বছরের ১ জুলাই দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘১৮ সালের পরিপত্র বহাল’ রাখার দাবিতে বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শেখ রাসেল চত্বরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেন।

এ সময় শহীদ আবু সাঈদকে ব্যানারের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন এবং মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এসময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত মিছিলে তার কণ্ঠে মুখরিত হয়েছিল রাজপথ— ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’

সহপাঠীরা বলেন, “সে ছিল শুধু নেতা নয়, প্রেরণা। সবসময় আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকার চেষ্টা করত। পাশাপাশি, আবু সাঈদ আন্দোলনকে বেগবান করতে সবাইকে উৎসাহ যোগাত।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন রংপুর হয়ে ওঠে আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট। বিশেষ করে ১৬ জুলাই, আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর এই আন্দোলন সারাদেশে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

ওইদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আয়োজিত এক মিছিলে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের নানা প্রান্তে ক্ষোভ ও শোকের জোয়ার ওঠে। পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ সব বড় শহরে কালো ব্যাজ ধারণ ও মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

মৃত্যুর আগের দিন, ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাকে স্মরণ করে আবু সাঈদ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন— “স্যার! (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার! আপনার সমসাময়িক যারা ছিলেন, সবাই তো মরে গেছেন। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।

আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে এক সময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন, মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না, আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।”

আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ এখন শুধু ইতিহাস নয়, প্রেরণার উৎসও। আন্দোলন কর্মীরা রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ রাখেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের নাম “শহীদ আবু সাঈদ গেট” নামকরণ করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার’। ২০২৫ সালের ২৮ মে, রংপুর জেলা সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন করে আবু সাঈদের মরনোত্তর সম্মানে রাখা হয় ‘শহীদ আবু সাঈদ সুইমিং কমপ্লেক্স’।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence