শহীদ জসিমের পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ, শোক আর অশ্রুই সঙ্গী 

  © টিডিসি ফটো

মুসলমানদের ধর্মীয় অন্যতম উৎসব ঈদুল ফিতর। এই দিনে দেশের প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে, ঘরে চলছে ঈদ আয়োজন। কিন্তু জামালপুরে জুলাই-আগষ্টে নিহত শহীদ জসিমের পরিবারে নেই কোন ঈদের আমেজ। এর বদলে রয়েছে শুধুই শোকের ছায়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে জসিমের এবারের ঈদ আনন্দ হয়েছে ম্লান ৷ 

তবে শোককে শক্তি করে দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবী করছেন জসিমের পরিবার। এদিকে ঈদে শহীদ পরিবারসহ আহত পরিবারগুলোর পাশে দাড়ানোর কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

রাজধানীর শাপলা চত্বর এলাকায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান জামালপুরের মেলান্দহ পুর্ব শ্যামপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম খোকার ছেলে এলাকার জসিম উদ্দিন (৩৪)। সেই থেকে তার মা আছিয়া বেগম ও মা জাহাঙ্গীর আলম প্রতিনিয়ত শোকাহত। ঈদের দিনে সবার পরিবারে যখন বিরাজ করছে আনন্দ। অপরদিকে বিষাদের সুর শহীদ জসিমের পরিবারে।

ঈদের দিন নামাজ শেষ করে ছেলে শহীদ জসিম উদ্দিনের কবর জিয়ারত করেছেন বাবা জাহাঙ্গীর। বাড়িতে এসে ছেলের ছবি দেখে কাঁদছেন জসিমের মা বাবা দুজনই । প্রতিবছর যেই সময়টাতে ছেলেকে কাছে পেতেন, সেই সময়টাতে আজ নিঃসঙ্গতা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। অভাব অনটনের সংসারের নেই ইদের কোনো আমেজ।

একসময় পরিকল্পনা ছিল দিনমজুর জসিম টাকা জমিয়ে ঘরবাড়ি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দে ইদ উদযাপন করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ কেবলই স্মৃতি। এক বুক শূন্যতা নিয়ে অসহায় বাবা মায়ের ও বোনের দিন কাটছে শুধুই চোখের জলে।

নিহত জসিম উদ্দিনের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘পড়নে যে শাড়িটা এটাও গত ইদে আমার বাবা জসিম উদ্দিনের দেওয়া। এবার বাবাও নাই আমার শাড়ীও নাই আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু যারা আমার বুক খালি করল, তাদের বিচার চাই। বাছাধন বেচে থাকলে কত আনন্দে এবার একসাথে নতুন ঘরে ইদ পালন করতাম। বাবা নাই আমার কিছুই না। কেমনে কি করবো কিছুই বুঝতেছি না। ইদে সবাই আনন্দ ফূর্তি করতেছে। আমাদের দিন শেষ হয়ে গেছে।’

অন্যদিকে, ভাইকে ছাড়া ঈদের কথা চিন্তাই করতে পারছেন না তার একমাত্র অসহায় বোন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি হওয়ায় পোশাক পরিচ্ছেদ ইদের কেনাকাটায় একমাত্র ভরসাও ছিল ভাই জসিম উদ্দিন। অভাবের সংসারে ভাইকে হারিয়ে যেনো সব হারিয়ে ফেলেছে সবকিছুই। তাই এবারের ঈদ তাদের জন্য শোকের এক অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহীদ জসিম উদ্দিনের বোন বলেন ‘আমাদের পরিবারে জসিম ভাই একমাত্র টাকা রোজগার করে সংসার চালাতো। জসিম ভাই ছাড়া আমাদের কেউ নাই। ভাইকে ছাড়া এবার প্রথম ইদ। আমাদের ভাইও নাই ইদও নাই। আজ আমরা দিশেহারা।’

শুধু জসিম উদ্দিনের পরিবার নয়, গণ অভ্যুত্থানে নিহত প্রতিটি পরিবারই একই শোকে নিমজ্জিত। ঈদের আনন্দ তাদের জীবনে অর্থহীন। তারা আজও বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন, অপেক্ষা করছেন ন্যায়বিচারের।

সরকারের নির্দেশনায় গণ অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জামালপুর জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অনেক কিছু বাস্তবায়নও হয়েছে। ইদ উপলক্ষে খাদ্যসামগ্রী ও প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের পাশে থাকার জন্য প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উল্লেখ, ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হন জামালপুরের ১৭ জন বাসিন্দা, আহত হন ১০৬ জন। সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের স্মৃতি এখনও টাটকা। প্রিয়জনের শোকে মুহ্যমান পরিবারগুলো শুধুমাত্র ন্যায়বিচার চায়, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারকে এভাবে স্বজন হারানোর কষ্ট সইতে না হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence