ছাত্র আন্দোলনের ‘বিপক্ষে অবস্থান’, শাস্তি পেলেন  ১৩৬ মেডিকেল শিক্ষার্থী

দেশের আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজের ১৩৬ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন
দেশের আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজের ১৩৬ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন  © ফাইল ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিপক্ষে অবস্থান’ নিয়েছিলেন সরকারি মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় দেশের আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজের ১৩৬ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন।

জানা গেছে, তাদের বিভিন্ন মেয়াদের জন্য ইন্টার্নশিপ ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত, হল থেকে বহিষ্কার, এমনকি মেডিকেল সার্টিফিকেট বাতিলের সুপারিশের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককে আজীবনের জন্য ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরোধিতা, আন্দোলনে নাশকতা তৈরির জন্য শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, সহিংসতা, মাদক চোরাকারবার ও সেবন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি, র‌্যাগিং ও ইন্টার্নদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।

১৩৬ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর মধ্যে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহমান মেডিকেল কলেজের ৩৯ জন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ২০ জন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের ১৯ জন, রংপুর মেডিকেল কলেজের ১৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ১০ জন এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চারজন রয়েছেন।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ৪ ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাজহারুল ইসলাম খানের সই করা অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৯ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, যারা শাস্তি পেয়েছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর দেওয়া অফিস আদেশ অনুসারে তারা ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে ২৮ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে, তাদের মধ্যে রাকিবুল একজন। তিনি বলেন, ‘১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সমাবেশে যোগ দেওয়ার কারণে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেদিন কোনো মারামারি বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করেছিলাম বলেই আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। আমার মতো অনেকেই রাজনৈতিক কারণে অভিযোগের শিকার হচ্ছেন।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথাযথ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আগের সরকারের সমর্থকরা পুরোনো অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তির মুখে পড়েছেন। এসব ক্ষেত্রে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অ্যাকাডেমিক নয়, রাজনৈতিক। সুতরাং, কলেজের প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগগুলো বৈধ কি না, তা যাচাই করার দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের।’ তার ভাষ্য, ‘শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে কী লাভ? বরং তাদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারো বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে কলেজ কর্তৃপক্ষের মামলা করা উচিত।’ [তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি স্টার]


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence