আহাদের বুক চিরে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় পুলিশের গুলি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ AM , আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ AM
দেশের সেবা করার স্বপ্ন ছিল আব্দুল আহাদ আলীর। যোগ দিতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে সে স্বপ্ন ভেঙে গেলো তার। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের জন্যই শহীদ হলেন আহাদ। গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে মহম্মদপুর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
জেলার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউনুস আলী ও পাখি খাতুন দম্পতির পুত্র আব্দুল আহাদ আলী (১৮) দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। স্থানীয় আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে থমকে গেছে ভ্যান চালক পিতার দিন বদলের স্বপ্ন।
ঘটনা ৪ আগস্টের। তখন বেলা ১১টা। মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্রদের একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ শুরুতে ছাত্রদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পাঁচজন ছাত্রকে আটক করে মহম্মুদপুর থানায় নিয়ে যায়। পাঁচজন ছাত্রর আটকের প্রতিবাদে অন্য ছাত্ররা আবারও সংগঠিত হয়ে দলবদ্ধভাবে মিছিল নিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্রদের মিছিলটি থানার কাছাকাছি গেলে প্রায় ৩ থেকে ৪শ গজ দূর থেকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে। এ সময় আব্দুল আহাদের বুক চিরে একটি গুলি পেছন দিকে বেরিয়ে যায়। থানার সামনে শহীদ হন আহাদ আলী।
আরও পড়ুনঃ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের তথ্য পূর্ণাঙ্গ করার আহবান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি
আহাদ আলীর বাবা ইউনুস আলী বলেন, আব্দুল আহাদ আলী অত্যন্ত সহজ সরল ছিল। সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। মহম্মদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে, মহম্মদপুর বরকতিয়া এস আর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। পরে আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। আহাদ আলীর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। আহাদ দেশের সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলো।
শহিদ আব্দুল আহাদ আলীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের কাছে এক পংক্তিমালা হস্তান্তর করে । এতে লেখা রয়েছে ‘তুমি আমাদের গর্ব, তুমি আমাদের অহংকার, তোমার ত্যাগের কথা, তোমার অবদানের কথা ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া, তোমাকে স্মরণীয় করে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব’।
আরও পড়ুনঃ আন্দোলনে নিহত কাইয়ুমের পরিবারকে ৭ লক্ষ টাকা প্রদান
আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জিএম শওকত রেজা বিপ্লব বলেন, শহিদ আব্দুল আহাদ আলী কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। সে অত্যন্ত বিনয়ী ও ভালো ছেলে ছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহিদ হওয়ার পর সমবেদনা জানাতে কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারীসহ তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
তিনি জানান, শহিদ আহাদ আলীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় কলেজের পক্ষ থেকে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। তার পরিবারকেও কলেজের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে ।
তিনি আরও জানান, তবে তার ভ্যানচালক পিতার পক্ষে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ কঠিন। তাই পরিবারটির আর্থিক সহায়তায় সকলের এগিয়ে আসা দরকার।