হাসিনার পতন আন্দোলনের ক্রেডিট নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করল শিবির

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি ও সেক্রেটারি। তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর জনমনে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। এরই মধ্যে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সাদিক কায়েমের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে অনেকে হাসিনার পতনের এই আন্দোলনের সব ক্রেডিট ছাত্রশিবিরের বলে মন্তব্য করছেন। তবে এই আন্দোলনের ক্রেডিট নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করলেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের মানুষ এক নির্মম ফ্যাসিবাদের মধ্য দিয়ে গেছে। ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশে স্বাধীনতার এক নতুন অরুণোদয় ঘটেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের শুরু থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও আন্দোলন করে এসেছে। তবে ৩৬ জুলাইয়ের বৈপ্লবিক সফলতা শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের একক প্রচেষ্টায় নয়; বরং দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সঙ্গত কারণেই এ আন্দোলনের সফলতার ক্রেডিট সবার।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের অবস্থান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সাদিক কায়েম ভাইয়ের ফ্যাসিবাদ ও ছাত্র রাজনীতি সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে অনেকে এই আন্দোলনের সব ক্রেডিট ছাত্রশিবিরের বলে মন্তব্য করছেন। অথচ ঢাবি সভাপতি তার পোস্টে এ রকম কোনো দাবি করেননি। বরং শুরু থেকেই ছাত্রশিবির এ আন্দোলনের সফলতার কৃতিত্ব দল-মত নির্বিশেষে বৈপ্লবিক ছাত্র-জনতাকে দিয়ে এসেছে। আমরা মনে করি, সবাই নিজের দলীয় কিংবা গোষ্ঠী পরিচয় পিছনে রেখে জাতীয় স্বার্থে এক কাতারে শামিল হতে পারা এ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। এ জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রশিবির তার পথচলার শুরু থেকে ছাত্রদেরকে আল্লাহভীরু, নৈতিকতাসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমাদের এ পথচলা কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বিশেষত বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে আমাদের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক নানামুখী জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমাদের শত শত ভাই শাহাদত বরণ করেছেন। অনেক ভাই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। হাজার হাজার ভাইকে কারাবন্দি হতে হয়েছে। ৬ জন ভাই এখনো গুম অবস্থায় আছেন। অসংখ্য ভাই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আমাদের সংগঠন পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছে। এরপরও একটি দিনের জন্যও আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। এটা একান্ত আল্লাহর সাহায্য ও কৌশল।

জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম অনেকের কাছে নতুনত্ব মনে হচ্ছে। মূলত ফ্যাসিস্টরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ ছাত্র-জনতার জানার সুযোগ কম ছিল। হয়তো এ কারণে অনেকের কাছে ছাত্রশিবির নতুন করে কার্যক্রম শুরু করছে বলে মনে হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির পরিচয় মিডিয়ার সামনে আসায় অনেকেই অবাক হচ্ছেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকেই ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়। অথচ সেই ঢাবিতে শিবিরের কার্যক্রম থাকবে না এটা কীভাবে সম্ভব! আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করি এবং সময় ও বাস্তবতাকে ধারণ করেই আমাদের কর্মকৌশল নির্ধারণ করে থাকি। ছাত্রশিবির দীর্ঘ সময় ধরে হল কিংবা ক্যাম্পাস দখল নয়, বরং এক সুমহান আদর্শ দিয়ে ছাত্রসমাজের হৃদয় জয় করার কর্মসূচি পালন করে আসছে; যা ভবিষ্যতেও যেকোনো পরিস্থিতিতে অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা সহকারে বলতে চাই, আওয়ামী ফ্যাসিবাদে আমাদের প্রকাশ্য কার্যক্রমে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা আমাদের সৃজনশীল এবং ছাত্র ও শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচিগুলো নিয়মিতভাবেই অব্যাহত রেখেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছি। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সুদৃঢ় থেকেছি। আগামীদিনেও আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের বহুমুখী কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো, ইনশাআল্লাহ। আমরা এ পথচলায় অতীতের মতোই ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর সমর্থন, সহযোগিতা ও ভালোবাসা পাবো বলে আশা রাখি।

“ফ্যাসিবাদের পতন বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। আসুন শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রত্যাশার আলোকে আমরা সবাই একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করি। বিশেষত সকল ভেদাভেদ ভুলে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবের অর্জন ‘জাতীয় ঐক্য’কে আরও মজবুত করি। আল্লাহ আমাদেরকে ছাত্র-জনতার স্বপ্নের ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence