‘আমি ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলাম না, কিন্তু...’— নিজের দর্শন নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস মাহফুজের

মাহফুজ আলম
মাহফুজ আলম  © ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন মাহফুজ আলম। জুলাই ছাত্র-আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানের আড়ালের নায়ক ধরা হয় তাকে। অনেকে মনে করেন এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। তবে মাহফুজ বলেছেন, ‘আমি ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলাম না’। তবে আন্দোলনে তার সমর্থন ছিল।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভ্যারিফাইড আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এ কথা জানান তিনি। 

গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে মাহফুজ আলমকে নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ছড়াতে থাকে। ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা কিংবা হিজবুত তাহরিরের প্রতি তার সমর্থন দেওয়ার ‘গুজব’ ছড়াতে থাকে।  মাহফুজ তার দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এ বিষয়েও কথা বলেছেন।

নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য মাহফুজ আলমের ইংরেজিতে দেওয়া স্ট্যাটাসটির বাংলা সংস্করণ হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘‘আমার বিরুদ্ধে একটা স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চলছে, বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বিএল) এর প্রোপাগাণ্ডা সেলে, যে- আমি ইসলামবাদী বা মিলিটারি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, বিশেষ করে হিজবুত তাহরিরের সাথে। আমি ছিলাম না!

ইকোনমিক টাইমসের একজন সাংবাদিক হিজবুত তাহরিরের প্রতি আমার ‘কথিত আনুগত্য’ সম্পর্কে লিখেছেন, যা ভারতীয় রাষ্ট্রের বর্ণনার সেবা ও একীভূত করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ইচ্ছাকৃত ফ্রেম করা।

আমি হিজবুত তাহরির এবং অন্য কোনো অগণতান্ত্রিক দলের মতাদর্শের বিরুদ্ধে ছিলাম এবং এখনও আছি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে আমিও যুক্ত ছিলাম না। আমি তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিনি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরে তাদের প্রোগ্রামে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু আমি বাংলাদেশের জন্য তাদের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।

আমি আক্ষরিক অর্থেই জামাতের ইসলাম গ্রহণ করিনি এবং এখনো করি না। অতএব, তামিরুল মিল্লাত বা ঢাবি’র অন্যান্য শিবির কর্মীদের মতো ‘লাভ’ বা ‘সুবিধাবঞ্চিত’ হইনি। কিন্তু ক্যাম্পাসে ইসলামোফোবিয়া আর শিবির ট্যাগিংয়ের মুখোমুখি হতে হলো।

অতঃপর মুজিববাদ, ইসলামোফোবিয়া, ইসলামবাদী মতাদর্শ বিরোধী বাঙালী মুসলমানদের ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে ‘একাকী’ পথ চলতে হলো। পরে, আমি সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক গবেষণা বৃত্তের সাথে জড়িত, যা জুলাই-আগস্টের উত্থানে আমার রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকার পথ সুগম করে।

আমি একজন ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলাম না। কিন্তু, ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি সিদ্ধান্ত ৯ পয়েন্টসহ আমার পরামর্শ এবং ‘সমর্থন’ ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে প্রায় সব অনুষ্ঠান ও বর্ণন আমার হাতে লেখা। আমার সার্কেল বা আমি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাঁচতে পারলে আপনি অবশ্যই সবকিছু জানবেন। দোয়া করবেন যেন আমরা সম্মানের জীবন যাপন করি অথবা শহীদ হই (শহিদান)

আমি একজন মুমিন এবং একজন বাঙালি মুসলিম। আমি ইসলামবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষবাদী মতাদর্শকে সমর্থন করি না। এই অঞ্চলে একটি সভ্যরূপে রূপান্তরিত রাষ্ট্র এবং সমবেদনা এবং দায়বদ্ধতা আদর্শের উপর ভিত্তি করে একটি সমাজের জন্য আমার একটি ভিশন আছে। নিপীড়িত বহুজনের ব্যক্তিগত ও যৌথ আকাঙ্খা রাষ্ট্রের নীতিতে অনুবাদ করার উপায় খুঁজে পাবে। ঢাকা হবে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সভ্যতার মিলন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল। ইনশাআল্লাহ!

আমি ইসলামাবাদ বা অন্য কোন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি বিরোধী নই। আমি মনে করি সম্প্রদায় এবং তাদের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি রাষ্ট্র গঠনে একটি সহ-অস্তিত্বীয় স্থান খুঁজে পাওয়া উচিত। রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকল্প কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি জন্য জায়গা সীমিত করা উচিত নয়। কিন্তু, এই অভিব্যক্তিগুলিকে ফ্যাসিষ্ট মতাদর্শের সঙ্গে এক করা উচিত নয়।

আমি কঠোর অর্থে লালন ও মার্ক্স অনুসারী নই, তাই ফরহাদ মজহারের ইসলাম ও মার্ক্সবাদ ভার্সনের সদস্যতা করিনা। লালনকে আমি বাংলার প্রাণসন্ধানী অনুশীলন ও আচার-আচরণ হিসেবে দেখি। এবং, যতক্ষণ না পুঁজিবাদ অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ মার্ক্স প্রাসঙ্গিক থাকবে। তবে বাংলা মুসলিমদের প্রশ্ন মূলত নদীমাতৃক ইসলাম ও বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কাঠামোর মধ্যে উল্লেখ ও আলোচনা করা উচিত। বাঙালি মুসলমানদের উচিত নিকৃষ্টতম জটিলতার বেড়ি ভেঙ্গে তাদের পূর্বপুরুষদের বিশ্বচিন্তা বিশ্বজগতে ব্যাখ্যা করা।

আমি কবর/ মাজার পূজারী নই। আমি বিভিন্ন তারিকদের সুফি ও ওলেমাদের পূজা করি। কৈশোরে ও পরে অনেক ওলামা ও পীরদের সাথে বসবাস ও যোগাযোগ করেছিলাম। এবং, এখনও, তাদের সাথে আমার একটি সংযোগ আছে। তারা আমাকে রাসূল (সাঃ) এর প্রেমে কবুল করেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আবার, আমি আপস করা এবং ফ্যাসিবাদ সক্রিয় করা পছন্দ করি না। আমি ঐসকল সুফি ও আলেমদেরকে ভালোবাসি, যারা হকের পক্ষে থাকে (সত্য ও অধিকারের পক্ষে) আমার মনে হয় এই কবর ধ্বংসকারীরা সত্যিই বাঙালী মুসলিম ও বাংলার সাধারণ আকাঙ্খা ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের বিরুদ্ধে।

ঐতিহাসিক সম্প্রদায় গঠন হিসাবে বাঙ্গালি মুসলমানদের দক্ষিণ এশিয়ার উপাল্টার্ন (নিপীড়িত হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম) জনতার সাথে জোটবদ্ধ করতে হবে। এইভাবে, তাদেরকে মুজিববাদ, ইসলামোফোবিয়া, হিন্দুত্ব, এবং ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে যাতে সুফিবাদ ও ইসলামবাদ সক্রিয় করে। আমরা অনেকবারই দেখেছি যে, ফ্যাসিস্ট বিরোধী ইসলামও মুজিববাদ ও হিন্দুত্বের জীবনরেখা হয়ে উঠেছে।

আমি আমার বাঙালি মুসলিম পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করি যারা ত্যাগ ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে একটি সম্প্রদায় গঠন ও গঠন করেছেন। এই সম্প্রদায়ের এই অঞ্চলে একটি ন্যায্য অংশ থাকবে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সত্য হবে। আমি ব্যাকডেটেড জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের নতুন ভাষা ও শব্দবিজ্ঞান দরকার আরো বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য- বাংলাদেশে এবং বাইরে।

আমার লেখায় কেউ কষ্ট পেলে আমি মন থেকে ক্ষমা চাই। আমি তোমাদের সবাইকে নাগরিক হিসেবে, ভাই ও বোন হিসেবে ভালোবাসি।

দয়াল দরদি নবীজিকে সালাম

Mahfuj Alam মাহফুজ আলম, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী’’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence