কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ০৪:২৬ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ০৪:৫৮ PM
বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভ নতুন করে ডালপালা মেলেছে। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
এ ঘোষণার দিন থেকেই ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় ঈদ হওয়াতে এ উপলক্ষ্যে ছুটিতে রয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাই প্রথম দফার আন্দোলন তীব্র না হলেও ঈদের পরপরই আগামী মাসের শুরুতেই তীব্র আন্দোলন শুরু হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুতির মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী এ আন্দোলন জনগণকে যাতে সরকারের বিরুদ্ধে না নিয়ে যায় সেটা বুঝে ব্যবস্থা নিতে সংসদে আহ্বান জানান তিনি। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগে কোটা প্রথা বহাল রাখার রায় দেওয়ায় হাইকোর্টকে ধন্যবাদ দেন সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এ প্রজন্মকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তারা আন্দোলন করছে, সেই ভাষা আমাদের বুঝতে হবে। সেটা অনুধাবন করে আমাদের সমঝোতার মাধ্যমে মিটমাট করতে হবে, যাতে আন্দোলনটা জনগণকে আমাদের পক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে না যায়। কারণ এ প্রজন্মের কাছে একদিন আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র গত ৫ জুন বাতিল করে হাইকোর্ট। এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হলেও ৯ জুন তা স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। আগামী ৪ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ আপিল আবেদনের শুনানি হবে। এতে করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবার বহাল হয়।
এর আগে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। সেটির চূড়ান্ত শুনানি করে ওই দিন রায় দেয় হাইকোর্ট।
এদিন সংসদে সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম এসব আন্দোলনকারীর সঙ্গেই কথা বলার প্রস্তাব দেন। অপরদিকে সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে আনায় হাইকোর্টকে দিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি তা পুনরায় চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধও করেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান।
ফিরিয়ে দেওয়া কোটা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক রহিমুল ফারুক বলেন, এটা আমাদের প্রাপ্য অধিকার বলে মনে করি। সেদিক থেকে এই রায় আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন, আমাদের অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। এমনকি ৩০ শতাংশের বদলে ২০ শতাংশ হলেও কোটাব্যবস্থা থাকা উচিত। হাইকোর্টের রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন হোক, এটাই প্রত্যাশা করি।
এদিকে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি নিয়ে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, সরকারের ইন্দনে সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ছাত্রসমাজ কোনোভাবেই তা বহাল রাখতে দেব না। ঈদের পর যখন ক্যাম্পাস খোলা হবে তখন ঢাবিসহ সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন জোরদার করা হবে। আমাদের দাবি আদায় হওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করবো। ২০১৮ সালের যতটুকু আন্দোলন বেগবান হয়েছিল, এবার তার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।