পরিচিত কাউকে বাসদ- ছাত্রফ্রন্টের ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেয়ার আহবান 

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমানের ফেইসবুক পোস্ট
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমানের ফেইসবুক পোস্ট  © সম্পাদিত

"আমি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনার পরিচিত কাউকে কখনোই বাসদ বা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিবেন না দয়া করে।" এভাবেই বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ও ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতিতে না আসার আহবান জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান। দলের ভেতর ঘটে যাওয়া একগাদা যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। 

বুধবার (৭জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে করা এক পোস্টে সংগঠনের কেন্দ্র ও তৃণমূল পর্যায়ে চলা নানান যৌন হয়রানির অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। একইসাথে সংগঠনের নেতাকর্মীদের 'একা না' উল্লেখ করে আওয়াজ তোলার আহবান জানিয়েছেন। 

সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে দলীয়ভাবে অস্বীকার করে ধামা চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করায়। এবং বাসদ নেতা ইমরান হাবিব রুমনের বিরুদ্ধে বারংবার যৌন হয়রানি ও প্রতারণার বিষয় সামনে আসার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়ায়, আমি শোভন রহমান সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাসদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছি বেশ কিছুদিন হয়েছে।

বাসদের সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি লিখেছেন, বজলুর রশীদ ফিরোজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আসে প্রায় ৯ মাস আগে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে। আমি নিজে চোখে দেখেছি তাকে দলের মেয়ে কর্মীদেরকে জনসম্মুখেই বাজে ভাবে টাচ করতে। এগুলো নিয়ে যখন আমি কথা বলতে শুরু করি, তারা মিটিং ডাকে। শুধুমাত্র যারা ঘটনা জেনে গেছে তাদেরকে নিয়ে করা হয় সেই মিটিং। আমি ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার অবস্থান জানান দিয়ে একটা চিঠি বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটিকে দেই ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই চিঠি নিয়ে আমার সাথে আলাদা করে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলী মিটিং করেন। তাদের মিটিং এর মূল বক্তব্য ছিল আমি যেন এই চিঠিকে সেন্সর করি, এই চিঠি যেন আমি পরিবর্তন করি। 

তিনি আরও লিখেছেন, তার জন্য নানান উল্টা পাল্টা যুক্তি তারা হাজির করে। এবং এর বাইরে আরও কিছু ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় প্রায় ৭-৮ টি মিটিং করে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই।প্রথমত তাদের মিটিং ডাকতে অনীহা ছিল। সেই কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় তাকে শান্ত করতে আবার মিটিং শুরু করে। দ্বিতীয়ত, তাদের মিটিং এর মূল উদ্দেশ্য অভিযোগগুলো সুরাহা করা ছিল না, ছিল অভিযোগটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা, সেগুলো হালকা প্রমাণ করা, ভিকটিমকেই ভুল, দোষী সাব্যস্ত করা। 

বজলুর রশীদ ফিরোজকে বিকৃত রুচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি কোন বিচারিক প্রক্রিয়ায় ঢুকতেই তারা নারাজ। ভিকটিমকে নানান ভাবে প্রভাবিত করা হয় এরই মাঝে। ৭-৮ টি মিটিং এ বজলুর রশীদ ফিরোজ একবারের জন্যও বলেননি তিনি এমনটি করেননি। তিনি উল্টো স্পষ্ট করে বলেছেন "আমি তো ভেবেছিলাম আধুনিক মেয়ে, কোন সংস্কার নাই নারী পুরুষ বিষয়ে, তাই"। তার এই কথায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি যৌন হয়রানি করেছেন। এবং তিনি "আধুনিক মেয়ে" দেখলে এমনটা নিয়মিতভাবেই করেন। তিনি একজন বিকৃত রুচি সম্পন্ন মানুষ। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে এটিই নতুন নয়। এটি সুবিদিত। তিনি বারবারই দলের বাছাইকৃত নারী কর্মীদেরকে হাউজে ডেকে নিয়ে এই কাজ করেন, এবং দলের একটা বড় অংশ এই আয়োজন প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করে, তাকে সুরক্ষা দেয়। এই ঘটনাতেও তাই ঘটেছে।

এদিকে বরিশালের নেতা ইমরান হাবিব রুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি লিখেছেন, ইমরান হাবিব রুমনের বরিশালের একজন নারী কর্মীকে নিয়ে একই অভিযোগ আসার পর চুপিসারে তাকে বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এবং ঢাকায় এসেও সে একাধিকবার একই ঘটনা ঘটায়। একজনকে জোরপূর্বক এবরশন করানোর ঘটনাও ঘটেছে। সেটা দলের কংগ্রেস চলাকালীন সময়ে। এই মুহূর্তেও সে এরকম ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। এতকিছুর পরও তাকে কিছুই করা হয় না, সে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে বোঝানো হয় যে "তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন, তিনি অনুতপ্ত, তিনি বিদেশ চলে যেতে চেয়েছেন, কান্নাকাটি করেছেন, আমরা তাকে এবং পার্টিকে রক্ষা করছি"। 

কমরেড খালেকুজ্জামানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দলের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান এইরকম ভয়ংকর একেকজন নিপীড়কদেরকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে থাকেন এবং সিমপ্যাথি জেনারেট করতে থাকেন। তিনি বজলুর রশীদ ফিরোজের জন্যও সিমপ্যাথি তৈরি করার জন্য একইরকম কথা বলেন যে তাকে নাকি এন্টি ডিপ্রেসেন্ট খেতে হচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং এভাবে তরুণ কর্মীদেরকে ধোঁকা দেন। 

এই ঘটনা শুধুই ঢাকায় ঘটে না। নানান সময় দেশের নানান জায়গায় তারা কর্মীদেরকে যৌন হয়রানী করে, অ্যাবিউজ করে, কাজ করার নামে নিজেদের আরাম আয়েশি জীবন যাপন নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে দাস হিসেবে খাটায় নেয়, তাদের জীবন থেকে সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়ে তাদেরকে শূন্য করে দেওয়া হয় যাতে তাকে ইমোশনালি ম্যানুপুলেট করা সহজ হয়, আর কেউ প্রশ্ন করলে তাদেরকে হেনস্তা করা হয়, এমনকি প্রহার করে কানের পর্দা পর্যন্ত ফাটিয়ে দেওয়া হয়। 

শোভন লিখেছেন, এই সবকিছুই করা হয় একটাই উদ্দেশ্যে। কতিপয় নির্ধারিত কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের বিপুল আরাম আয়েশি জীবন রক্ষা করা। "বিয়ে করে নাই, বাচ্চা নাই, চাকরি করে নাই, ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করছে" বলে বলে একটা দেবতাসম ইমেজ মানুষের সামনে দাঁড় করানো।  আর গোপনে গোপনে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানী, প্রতারণা সহ সমস্ত ধরণের অপকর্ম কুকর্ম নির্বিঘ্নে করে যাওয়া, এবং একটা নিরাপদ নিশ্চিত জীবন। 

তারা রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতির মুখোশ সামনে ধরে রেখে মূলত এগুলাই করে। 

বাসদকে ধর্ম উল্লেখ করে শোভন বলেন, এইটা কোন পার্টি না, এইটা একটা কাল্ট cult (ধর্মবিশ্বাস)। কর্মীদের ভেতর তারা কৃত্রিম ভাবে ভয় এবং অপরাধবোধ উৎপন্ন করে বলে বেশিরভাগ কর্মীরাই ঘটনাগুলোকে "বিপ্লব" বা "বৃহত্তর স্বার্থের" নামে চুপচাপ মেনে নেন, অথবা কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে নোংরা কুৎসা রটানো হবে বলে চুপ করে বের হয়ে যান। 

সংগঠন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, সম্প্রতি আমার নামে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে যে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজে নিষ্ক্রিয়। আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম না, আমি স্বেচ্ছায় সংগঠন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম কারণ আমি বুঝে গিয়েছিলাম তারা ঘটনার সুরাহা করতে মিটিং করেনি, তারা তাকে ধামা চাপা দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েই মিটিং করেছে। যাতে তারা আমার কোন ক্ষতি করতে না পারে। 

শোভন লিখেছেন, আমি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনার পরিচিত কাউকে কখনোই বাসদ বা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিবেন না দয়া করে। আর যারা অনেক কিছু দেখে শুনেও বুঝেও এখনও এই দলের ভেতর ভয়ে বা অন্ধ ভাবে ব্রেইনওয়াশড হয়ে, চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরকে আহ্বান জানবো, আপনারা আওয়াজ তুলুন। একা না আপনি। আপনার সাথে অনেকে আছে। আমি আওয়াজ তুলছি, আপনারা আওয়াজ তুললে এদের প্রতারণা মানুষের সামনে উন্মোচিত হবে, আর কারোর জীবন ধ্বংস হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence