ঢাবির হলে চার শিক্ষার্থীকে মারধর ছাত্রলীগের

মাস্টারদা সূর্যসেন হল
মাস্টারদা সূর্যসেন হল  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলের চার শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, পেটানোর পরে তাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক মুচলেকা নিয়ে হলছাড়া করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামের বড় ভাইয়ের অবৈধভাবে রুম দখলকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী চার ছাত্র হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আল-আমিন ও আরবি বিভাগের একই বর্ষের আশিকুর রহমান। তাঁরা সূর্য সেন হলের ৫৩২ নম্বর কক্ষে থাকেন।

ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানায়, ৫৩২ নম্বর রুমে তাদের সঙ্গে সুমন আহমেদ নামের একজন অছাত্র থাকেন। তিনি প্রায়ই সময়ই অন্য ছাত্রদের ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ বড় ভাই’ পরিচয় দিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। গত রবিবার সুমনের সঙ্গে রুমের অন্য ছাত্রদের ঝগড়া হয়। পরে সুমন তার পরিচিত কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে রুমে এনে রুমমেটদের হুমকি দেন। এসময় সুমনের বিরুদ্ধে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন তা সিয়াম রহমানকে জানান।

তারা আরও জানান, গতকাল বেলা তিনটার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমান নিজের কক্ষে (৪৫০ নম্বর) আলম বাদশা, লুৎফুর রহমান, আল-আমিন ও আশিকুর রহমানকে ডেকে মারধর করেন। এতে সিয়াম রহমানের সহযোগী হিসেবে ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা এ কে এম তৌহিদুজ্জামান, আবদুল আহাদ, মুহাম্মদ তালহা, হামিদ কারজাই ও মাজহারুল ইসলাম। জানা যায়, মারধরে আহত আলম, লুৎফুর ও আশিকুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন হলের বাইরে অবস্থান করছেন।

ভুক্তভোগী আলম বাদশার বলেন, সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান আমাদের গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি আমাদের অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকেন। পরে সিয়াম ও তার সহযোগী আহাদ ও হামিদ মিলে আমাদের মুঠোফোন ঘাটতে থাকেন। এসময় আপত্তিকর কিছু না পেয়ে তারা আমাদের চারজনকে তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে আমাদের কিলঘুষি ও থাপ্পড় দেন আর লাথি মারেন। 

আলম বাদশা আরও বলেন, সিয়াম রহমান জোরপূর্বক আমাদের কাছ থেকে সরকারবিরোধী মুচলেকা নেন যে, আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি কক্ষের বড় ভাইকে অন্যায়ভাবে বের করেছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই—ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছি। এটা হলের বড় ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেন। আমি সজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। মুচলেকা দিয়ে রাত আটটার সময় ছাড়া পাওয়ার পর থেকে আমরা হলের বাইরে আছি।

এ বিষয়ে সুমন আহমেদ বলেন, গত পরশু (রবিবার) আশিক বলে আমি কবে রুম ছেড়ে দিবো! তখন বলি, কোন একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে ছেড়ে দিব। সোমবার আমার কাগজপত্র ও জিনিসপত্র রুম থেকে করিডোরে বের করে রাখে এবং আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আপনার জিনিসপত্র রুমের বাহিরে আছে, আমরা জুনিয়র তুলব। অইদিন  দুপুরে এসে দেখি সব জিনিসপত্র বাইরে , কিন্তু তারা আমাকে রুমে ৫ মিনিট বসারও সুযোগ দিল না। বিষয়টি আমি হল ছাত্রলীগের ছোট ভাইদের জানালে তারা আমাকে আশ্বস্ত করে, আমি হলে থাকতে পারব।

অভিযোগ অস্বীকার করে সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান বলেন, ৫৩২ নম্বর রুমে আলম বাদশাসহ ওই চারছাত্র রুমে বসে সরকারবিরোধী নানা কথাবার্তা বলে থাকেন। ওই কক্ষে একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীর (সুমন আহমেদ) জিনিসপত্র রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ সুমনই তাদের ওই রুমে তুলেছিলেন। সুমনকে তারা এ–ও বলেছেন যে, ‘আমরা ছাত্রলীগ করি, আমরা তো এটা করবই; হলে কে থাকবে না থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নেব।’

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ