৩০তম জাতীয় সম্মেলন

বয়সসীমা নিয়ে দ্বিধায় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা

  © লোগো

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে সংগঠনটির ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে হিসেবে ৪ বছরের বেশি সময়ের পর অনুষ্ঠিত হবে ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) অনুচ্ছেদে কমিটির মেয়াদ দুই বছর উল্লেখ রয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় এই কমিটির মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হয়েছে। তাই এবারও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা আবারও পরিবর্তনের প্রত্যাশা পদপ্রত্যাশীদের। গঠনতন্ত্রের ধারা ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ থাকলেও আসন্ন সম্মেলনে তা বাড়িয়ে ৩০ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সে হিসেবে পদপ্রত্যাশীদের বয়সের ছাড় দেয়া হলেও অধিকাংশেরই থাকবেনা ছাত্রত্ব। এমনকি নিয়মিত ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ৫-৬ বছরও হয়েছে অনেকের। তবে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ ‘ডাবল মাস্টার্স’ও করছেন বলে জানা গেছে। 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১১ এর ‘খ’ উপধারা অনুয়ায়ী, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল ২ বছর। এ সময়ের মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। কিন্তু এ কথা কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই’র মত অবস্থা। ২ বছরের পরিবর্তে ৪ থেকে ৫ বছর পরে কমিটি দিয়ে আসছে গত কয়েক কমিটি।

‘গ’ উপধারা অনুয়ায়ী, ‘বিশেষ বা জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির মেয়াদ বাড়লে জরুরি সভা করে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কমিটির কার্যকাল ৩ মাস বৃদ্ধি করা যাবে। উক্ত সভায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ’ এখন পর্যন্ত এ নিয়ম মানা হয়নি।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় ওই সম্মেলন। এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন ও রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

একই সময়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়।

সূত্র মতে, ২৯তম সম্মেলনের আগে তিনটি (২০০৬, ২০১১ এবং ২০১৫) সম্মেলনে ছাত্রলীগের যে শীর্ষ নেতৃত্ব উঠে এসেছিল তারা প্রত্যেকেই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই এসেছেন। কথিত এই সিন্ডিকেটের মূল নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতি। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাধিক সাবেক নেতা। ২০০৬, ২০১১ এবং ২০১৫ সম্মেলনে এই সিন্ডিকেট যাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন তারাই নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ দুটিতে।

তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন। এবারও পদপত্যাশীরা নেতৃত্ব বাছাই করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অভিভাবক মনে করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ছাত্রলীগের সম্মেলন হলেও তিনিই মূলত শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করবেন বলে তারা মনে করছেন।

জানতে চাইলে আগামী সম্মেলনে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের একজন ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক আমাদের আপা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন সম্মেলন নিয়ে উনি যাই সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বরাবরের মতো যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে প্রতিহত করছে তারাই নতুন নেতৃত্বে আসুক। আরেকটি বিষয় যারা শিক্ষার্থীবান্ধব ও শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।

তথ্য মতে, ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের আগে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ বছর থাকলেও ওই সম্মেলনের দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ২৮ বছর বয়সীরা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর জয়-লেখক দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২০ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ করা হয়।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। পদপ্রত্যাশীদের একটা অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আনন্দ মিছিল করেছেন। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চার শীর্ষ পদে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) স্থান পেতে এরইমধ্যে পদপ্রত্যাশীরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা হাইকমান্ডের কাছে গিয়ে লবিংয়ে তৎপর রয়েছেন। যাতে তাদের নাম সভানেত্রীর কাছে উত্থাপন করেন হাইকমান্ডের নেতারা।

নতুন সম্মেলনকে ঘিরে ডজনেরও বেশি নেতা প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন পদ প্রত্যাশীদের দৌঁড়ে রয়েছেন বর্তমান ২০১১-১২ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, হায়দার মোহাম্মদ জিতু (প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক), খাদিমুল বাশার জয় (কর্ম-সংস্থান বিষয়ক উপ সম্পাদক), শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান (সাংগঠনিক সম্পাদক), তাহসান আহমেদ রাসেল (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), সাদ বিন কাদের চৌধুরী (সাংগঠনিক সম্পাদক), মেহেদী হাসান তাপস (মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক), নাহিদ হাসান শাহিন (মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক), ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত (আইন সম্পাদক) প্রমুখ। এদের সবার বয়স ২৯ এর আশপাশে থাকলেও কারও ছাত্রত্ব নেই। নিয়মিত ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ৫-৬ বছরও হয়েছে তাদের অধিকাংশের। তবে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স করছেন বলে জানা গেছে।

আবার অনেকের বয়স ২৯ পেরিয়ে যাবে। তেমনি একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ মাসে তার বয়স ২৯ পেরিয়ে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ, সম্মেলনের সময় তিনি ৩০ বছরে পা দিবেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা মেনে নেবে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী।

প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে আরও রয়েছেন সৈয়দ আরিফ হোসেন (সহ-সভাপতি), মাজহারুল ইসলাম শামীম (সহ-সভাপতি), সোহানুর রহমান সোহান (সাংগঠনিক সম্পাদক), রনি মুহাম্মদ ( কর্মসংস্থান সম্পাদক) মো. শাহ জালাল (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি), আল-আমিন (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক), বরিকুল ইসলাম বাধন (সাংগঠনিক সম্পাদক), তানভীর হাসান সৈকত (উপ-সমাজসেবা সম্পাদক) প্রমুখ।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। এখন সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন উপকমিটি করে সম্মেলনের আয়োজন করবেন। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন, ক্লিন ইমেজের তাকে শীর্ষ দুই পদের দায়িত্ব দেবেন।

ছাত্রলীগের দেখভাল করার দায়িত্ব থাকা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন। তাই এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ভালো, কোনও বিতর্ক নেই, ভালো কাজ করে নিজেদের ইমেজ ক্লিন রেখেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়, তাদের মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ