বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ছাত্রলীগের
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৫১ PM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৫১ PM
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না শাসক দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের। ইডেন কলেজের পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে চাকরিজীবী এক নেতা তার কক্ষে এসি লাগিয়ে আলোচনায় এসেছেন। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বেদম পিটুনি নিয়ে ছাত্রলীগের সমালোচনা চলছে।
ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির নেপথ্যে আছে সিট বাণিজ্য। নানা সূত্রের দাবি, কলেজের হোস্টেলে টাকার বিনিময়ে কক্ষ বরাদ্দই শুধু নয় অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগও করেছেন খোদ কলেজেরই শিক্ষার্থীরা। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসে তাদের বেদম মারপিট করা হয়। যদিও ভিসি তাদের দেখা করার জন্য সময় দিয়েছিলেন।
এরমধ্যেই শনিবার বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এক চাকরিজীবী ছাত্রলীগ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে তার রুমে এসি লাগিয়েছেন। চাকরিজীবীদের ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকার সুযোগ না থাকলেও তিনি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।
জানা গেছে, তিনি হলটির ৩১৩ নাম্বার কক্ষে থাকেন। সেখানে শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নয়, আছে রেফ্রিজারেটরও। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত আছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
এদিকে ছাত্রলীগের এমনসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোদ সংগঠনটির নেতারাই সমালোচনা করছেন। এ বিষয়ে তারা দলীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলেও জানান। আর সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দাবি, অভিযোগ পেলে তদন্ত তরে তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
লম্বা হচ্ছে বিতর্কের তালিকা
এদিকে রাজশাহীতে ছাত্রলীগের সভাপতি পদ সাকিবুল ইসলাম সাবেক শিবির নেতা বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে নারীদের উত্যক্ত করার অডিও ভাইরাল হয়েছে। এই বিষয়ে এখন তদন্ত চলছে। অভিযোগ আছে নিয়ম অনুসরণ না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে সভাপতি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভালোবাসা থেকেই সেই রিয়াদ ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে থাকেন: জয়
গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় শোভন ও রাব্বানীকে টেন্ডারবাজির অভিযোগে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে উপাচোর্যের কাছে তারা চার থেকে ছয় পার্সেন্ট চাঁদা দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ। ছাত্রলীগকে শোধারানোর জন্য এরপর জয়-লেখককে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু গত দুই বছরেরও বেশি সময়ে আসলে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যে অভিযোগ এখন বেশি করে শোনা যাচ্ছে তা হলো ছাত্রলীগের পদ বাণিজ্য। ছাত্রলীগের ১২১টি ইউনিটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫২টি ইউনিটের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার যেমন অভিযোগ আছে, তেমনি পুরনো কমিটি ধরে রাখার অভিযোগও আছে।
আরও পড়ুন: রিভা তো ফেরেশতা না, মানুষ ভুল করতেই পারে: তিলোত্তমা
সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি দেয়া হয় প্রেস রিলিজের মাধ্যমে। এর বিরুদ্ধে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।
তাদের অভিযোগ সাত মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নাজমুল ইসলামকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন পদ নিয়ে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে।
কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে এক নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের' অভিযোগের মূলহোতা আশিকুল ইসলাম আশিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলে অভিযোগ আছে।
১ জানুয়ারি ঘোষিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীর বয়স ৩০ বছরের চেয়ে বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।
যশোর জেলা কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও সেবনের অভিযোগ রয়েছে। ফেনসিডিলসহ একবার তিনি পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন। ওই কমিটির নয় জনের অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা, বিবাহিত, অছাত্র ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া মো. আল আমিন একজন অছাত্র।
ছাত্রলীগই অভিযোগ করছে
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামাল খান অভিযোগ করেন, ‘‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির মতামত না নিয়ে কমিটি গঠন করায় ছাত্রলীগ বিতর্কিত হচ্ছে। আমরা অভিযোগ পাই লেনদেনের মাধ্যমে প্রেস রিলিজ দিয়ে কমিটি দেয়া হয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ আমাদের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিকার পাবো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই কারণেই এখন ছাত্রলীগের কমিটিতে, অছাত্র, বিবাহিত, বিতর্কিতরা জায়গা পাচ্ছে। তারাই নানা অঘটন ঘটাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি রিভা-সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে মামলা
অভিযোগ অস্বীকার সাধারণ সম্পাদকের
পদ বাণিজ্যসহ এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি দাবি করেন, ‘‘নিয়ম মেনে, গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি দেয়া হচ্ছে। তারপরও রাজশাহীতে যে বিতর্ক উঠেছে তা আমরা তদন্ত করছি। একজনের নৈতিক স্খলনের দায় তো সংগঠন নেবে না।’’
ইডেন কলেজের ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘এটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অন্য পদের কিছু নেত্রী অবস্থান নিতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে যাতে পুরো কলেজের তারা বদনাম করেছে। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আরো তদন্ত হচ্ছে।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপরে হামলা ঘটনাটিকে তিনি প্রতিরোধ হিসবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে যখন তারা ক্যাম্পাসে বক্তৃতা দিয়ে ৭৫-এর ঘটনা ফের ঘটানোর হুমকি দিয়েছে। তারপর ওই দিন তারা লাঠি হাতে এসেছে। তাদের এই আচরণে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ ছিলো। তাই তাদের প্রতিরোধ করা হয়েছে।’’
তার কথা, ‘‘ছাত্রলীগে অছাত্র, বিবাহিত বা চাকরিজীবীদের কোনো জায়গা নেই। জহুরুল হক হলে যারা রুমে এসি লাগানোর কথা বলা হচ্ছে তিনি চাকরি পাওয়ার পরই ছাত্রলীগে আর নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অটোমেটিক তার পদ শূণ্য হয়ে গেছে। তবে হলে এসি লাগানোর ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটা সম্ভবও না।’’তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই।’’ [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]