মানুষ বলে তুমি খাটো, ক্লাসে অনেকেই আমার সঙ্গে বসতে চায় না

তানিয়া
তানিয়া  © সংগৃহীত

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে তানিয়া (১৯)। তাকে দেখে ৭-৮ বছররে মনে হলেও পড়াশোনা করেন আনার্সে। বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠন বাচ্চাদের মতো। বয়সের তুলনায় বেড়ে না উঠায় লোকে তাকে বাঁকা চোখে দেখেন। লম্বা ৩-৪ ফুট হওয়ায় কেও মিশতেও চায় না তার সঙ্গে।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বেরুয়ান গ্রামের মেয়ে তানিয়া। বাবা দরিদ্র কৃষক তাইজুল ইসলাম ও মা নাসিমা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে সে। পড়াশোনা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তানিয়া বড়। তানিয়ার জন্ম ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল।

সংবাদমাধ্যমের দেয়া সাক্ষাৎকারে তানিয়া বলেন, যখন মানুষ আমাকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে তখন আমি আল্লাহর কাছে বলি তিনি কেন আমাকে এরকম বানাই ছিলেন। আমার বাবা দিন আনে দিন খায়। তিনি রোজ ৫০০ টাকা মজুরি পান।

‘‘আমার ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও চালাতে হয়। সে অনেক কষ্টে আমাদেরকে লেখাপড়া করাচ্ছে। ক্লাসে গেলে অনেকেই আমার সঙ্গে বসতে চায় না। আমার বন্ধুরা শারীরিকভাবে বড় হওয়ায় আমাকে খেলতে নেয় না। আমার সাথে সবাই খারাপ ব্যবহার করে। মানুষ বলে- তুমি খাটো মানুষ।’’

তিনি আরও বলেন, মানুষ অনেক ধরনের কথা বলে; বাউল দাস জীবনে বড় হবে না। আবার অনেক ছোট থেকে বড় মানুষ এরকম কথা বলে, আরে তুই জীবনে বড় হয়ে লেখাপড়া করে কি লাভ নানান ধরনের কথা বলে। আমার ইচ্ছে আছে আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু মানুষ বলে- তুমি খাটো মানুষ আইনজীবী হতে হলে লম্বা-বড় হতে হয়। তারপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। কিন্তু আমার বাবা-মা অনেক দরিদ্র, আমার পড়ালেখার খরচ দিতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

তানিয়ার বাবা বলেন, ঢাকা শহরে আমি ১৫ বছর রিকশা চালিয়েছি। তারপরে যখন ঢাকা ফিরে আসি তখন আমার মেয়ের বয়স অনেক কম ছিল। ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এসে কৃষি কাজ শুরু করি। ডাক্তার আমার মেয়ে সম্পর্কে বলেছে তার রক্তে অনেক সমস্যা রয়েছে।

‘‘অন্য মেয়েদের মতো আমার মেয়ে না। অনেকেই অনেক কথা বলে। পড়াশোনা করিয়ে লাভ নেই, ও ছোট, ওর চাকরি হবে না। এরকম অনেক কথা শুনতে হয় মানুষের মুখ থেকে। এসব কথা শুনে তানিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন। কিন্তু আমি সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের কয়েক বছর পর তারা বুঝতে পারেন, তানিয়া বড় হচ্ছে না। তখন ডাক্তারের কাছে যান। প্রথমে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, মেয়েটির অনেক দিন উন্নত চিকিৎসা করতে হবে। শুরুতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে  চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু ৩-৪ মাস চিকি’সার পর টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর কোনো চিকিৎসা করা হয়নি।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তানিয়া বলেন, আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না। আমাকে নানান মানুষ খারাপ কথা বলে। হয়তো আর ১০টা মেয়ের মতো হলে এমন করতো না। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। আমি চাকরি করে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই; সরকার যেন আমাকে একটা সুযোগ করে দেয়।

আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম জানান, তানিয়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও তার মানসিক শক্তি অনেক বেশি। যে কারণে তিনি অনার্সে লেখাপড়া করতে পারছেন। উনার বিষয়ে জানার পরই তাকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া শুরু হয়েছে। তানিয়ার চিকিৎসার সকল ব্যয় আমরা বহন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার পরিবারকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ