দোকানদারি করে সংসার চলে বিসিএসে ১৭তম শাহিনের

দোকানে বসে বই পড়ছেন ৪০তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহিন
দোকানে বসে বই পড়ছেন ৪০তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহিন  © সংগৃহীত

দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. শাহিনের বাবা মুদি দোকানি। মা সংসার সামলানোর পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন। এর মাধ্যমে যে টাকা পেতেন, তা শাহিনের পড়াশোনায় খরচ করেছেন। সেই মায়ের কষ্ট আজ লাঘব হয়েছে। ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে ১৭তম হয়েছেন শাহিন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের তামাকপট্টি এলাকার মো. আসলাম ও নূরজাহানের ছেলে মো. শাহিন। আরও তিন ভাই ও এক বোন রয়েছে তার। তিনি ভাই-বোনদের মধ্যে তৃতীয়। ২০১০ সালে গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ পান। এরপর গোপালপুর কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন।

শাহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাবার দোকানে বসে শাহিন দোকানদারি করছেন। ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির ফাঁকে বইও পড়ছেন। জরাজীর্ণ একটি ঘরের সামনের অংশে দোকান। পেছনের অংশে পড়াশোনার কক্ষ। আরেক কক্ষে মা সেলাইয়ের কাজ করেন। আর একসঙ্গে লাগানো দুটি টেবিলে তিন ভাই-বোন পড়াশোনা করেন। বাবা স্ট্রোক করায় তেমন কাজ করতে পারেন না, কথাও বলতে পারেন না ঠিকমতো। বড় ভাই দোকানে বসে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে সংসার চলে।

স্থানীয় নূরে আলম বলেন, তাদের বাবা-মা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। জমিজমা বলতে ঘর ছাড়া কিছুই নেই। সেলাইয়ের কাজ করেন মা নূরজাহান। বাবা ও ভাই তাওহীদ দোকানে চালান। এর উপার্জন দিয়ে কষ্টে সংসার চলে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী শাহিন। শাহিন দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি দোকানদারি করেছে, পরিবারকে সহায়তা করেছে।

আরো পড়ুন: শিক্ষায় ‘উল্টোপথে’ বাংলাদেশ

শাহিনের বড় ভাই তাওহীদ বলেন, ‘বাবা এখন দোকানে বসতে পারেন না, তাই আমি চালাই। শাহিন বাড়িতে আসলে দোকানে বসে।’

শাহিনের মা নূরজাহান বলেন, ‘অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। সেলাই করে যে টাকা আয় হতো, সব ছেলের পেছনে ব্যয় করতাম। ছেলেও কষ্ট করেছে। এখন মায়ের কষ্ট সে লাঘব করেছে। আমি খুবই গর্বিত ও আনন্দিত।’

শাহিন বলেন, ‘আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মায়ের। মা যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। দোকানের আয় থেকে কোনো মতে সংসার চলে। পড়াশোনার পাশাপাশি দোকানে বাবাকে সহায়তা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তেমন বসতে পারিনি। এখন বাবা অসুস্থ হওয়ায় দোকান চালান বড় ভাই। বাড়িতে আসলে দোকানে বসতাম।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence