পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘পথের ইশকুল’

‘পথের ইশকুলে’ পড়াশোনা করতে আসা পথশিশুরা
‘পথের ইশকুলে’ পড়াশোনা করতে আসা পথশিশুরা   © সংগৃহীত

আমাদের দেশে প্রায়শই নজরে পড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু। যারা অন্যান্যদের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ ও বাসস্থান পাচ্ছে না। কখনো কখনো পাচ্ছে না দু’মুঠো খাবার। সেকল সুবিধাভোগী শিশুদের নিয়ে সমাজের মাথা নেই। সবাই তাদের নিয়ে ভাবে না। তাদের নিয়ে ভাবার সংখ্যাটা খুবই কম। পথশিশুদের দুর্দশা ও দুর্গতি দেখে তাদের নিয়ে ভাবতেন সাকির ইব্রাহিম মাটি।

সাকিরের সে ভাবনা থেকে বন্ধু ও কাছের মানুষদের সহায়তায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি নিয়ে বাঁচতে চাই’ এই আদর্শ বুকে লালন করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পথের ইশকুল’ নামের একটি প্রি-এডুকেশনাল স্কুলের। যেখানে বিনামূল্যে পড়ানো হয় পথশিশুদের। শুরুতে শুধু পাঠদান করা হলেও বর্তমানে পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসব পালন,খেলার আয়োজন, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে 'পথের ইশকুল'।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে
অভিনব পথের ইশকুল প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করা।পাশাপাশি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া সন্তানদের শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করা।তাছাড়া উদ্দেশ্য হলো, সেকল সুবিধাবঞ্চিতদের ঝরে পরা রোধ, আয়ের উৎস অনুযায়ী শিক্ষিত করে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিতে সাহায্য করা, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীতে রুপান্তর, সামাজিক উন্নয়ন এবং শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে সচেতন করা।

পাঠদান পদ্ধতি
‘পথের ইশকুলে; পাঠদান করানো হয় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। একজন পথশিশু শিখছে বিভিন্ন দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস, পরিচিত হচ্ছে বর্ণমালার সাথে। তাছাড়া বিজ্ঞান ক্লাসে শিখছে মজার বিজ্ঞান। সেইসাথে জানার মাধ্যমে আনন্দ ভাগাভাগি করছে একে অন্যের সাথে। বর্তমানে রাজধানীর গুলিস্তান, স্টেডিয়াম, মতিঝিল ও আরামবাগে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের শিক্ষার বিনিময়ে এক বেলার খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পড়তে আসা প্রতিটি শিক্ষার্থী শিক্ষার পাশাপাশি আহারও পাচ্ছে। প্রথমদিকে সপ্তাহে একদিন ফরমাল এডুকেশনের ক্লাস নেওয়া হতো। কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে, শিক্ষা হয়  বিলাসিতার উপকরণ। তাই শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে ওদের মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করে পথের ইশকুল। এরপর থেকে ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ এই ধারণা থেকে কাজ করে চলেছে। 

বিভিন্ন কার্যক্রম
পথের ইশকুলে শুধু পাঠদানই করানো হয় না। পাঠদানের পাশাপাশি পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর সন্তানের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে ‘আলোকিত আগামী’, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা কমাতে ‘একটুখানি কুইজ’, দরিদ্র দূরীকরণ ও সচ্ছলতা আনয়নে ‘রিপিয়ার দ্য কালার’, মেয়েদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ‘মেন্টাল হাইজিন অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম’, কিশোরদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ‘প্রোজেক্ট কিশোর’ ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তায় ‘পথের ইশকুল স্পোর্টস একাডেমি’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পথের ইশকুল। 

ভলান্টিয়ারদের ট্রেনিং
পথের ইশকুলে ভলান্টিয়ার হিসেবে আছেন কিছু মেধাবী ও চৌকস শিক্ষার্থী। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠদান করান ও নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পথের ইশকুলকে। আর ভলান্টিয়ারদের কাজের গুণগত মান বাড়াতে এবং তাদেরকে দক্ষতার সাথে কাজ করতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে পথের ইশকুল। যেখানে বিভিন্ন ট্রেনাররা শিক্ষাদান করেন।

যেভাবে চলে পথের ইশকুল
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সময় ও মেধার দ্বারা চলছে পথ শিশুদের পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম। আর পথের ইশকুলের এসব কার্যক্রম চলে বিভিন্ন মানুষের সহায়তার মাধ্যমে। সাহায্য করার মাধ্যমে যেকেউ যুক্ত হতে পারেন এ কাজে। বর্তমানে ফান্ডিং বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 
সাকির জানান, পথশিশুদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য ও শারীরিক, মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে ‘পথের ইশকুল স্পোর্টস একাডেমি’ এর যাত্রা শুরু হয়েছে। আশা করা যায় এভাবেই দৈনন্দিন পথশিশুদের সহায়তার মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে ‘পথের ইশকুল’। যার ফলে সুবিধা বঞ্চিত এসব পথশিশুরাও শিক্ষার আলো পাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশের কাজে লাগবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence