উচ্চতার বাধা কাটিয়ে উচ্চশিক্ষার পথে নাহিদ

মা-বাবার সঙ্গে শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন
মা-বাবার সঙ্গে শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন  © সংগৃহীত

দেখতে ৭-৮ বছর বয়সী শিশু মনে হলেও বয়স নাহিদ হোসেনের বয়স ২১। তার উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট। উচ্চতা নিয়ে তাকে বিভিন্ন সময় কটু কথা শুনতে হয়। হাসাহাসি করে মানুষ। তবুুও তিনি সব সংকোচ ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। তাইতো উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি।

অংশগ্রহণ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়। তবে কৃতকার্য হননি। সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে হরিণাকুন্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে আশাবাদী। 

ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদহ ইউনিয়নের ভেড়াখালী গ্রামের কৃষক আরিফুর মালিথা ও মোছা. পারভীনা বেগম দম্পতির ছেলে নাহিদ হোসেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় নাহিদ। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তার ছোট বোন তৃতীয় শ্রেণিতে স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে। 

নাহিদ গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০১৪ সালে। ভেড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে জিপিএ-৩.৩৩ নিয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন এবং জোড়াদহ কলেজ থেকে ২০২২ সালে জিপিএ- ৪.০ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তির সুযোগ না হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন বলে আশাবাদী নাহিদ।

নাহিদের মা পারভীনা বেগম জানান, ছোট থেকে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল নাহিদ। ৮ বছর বয়স থেকেই তার এমন সমস্যা। উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় ডাক্তার দেখানো হয়। তখনই জানতে পারি হরমোন জাতীয় সমস্যার কারণে শরীর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ডাক্তারের সঙ্গে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ করি। তখন ডাক্তার জানালেন তার চিকিৎসা জন্য ১৪ লাখ টাকা খরচ হবে। তারপরও এই রোগের সমাধান হবে কিনা নিশ্চিত না। এজন্য ওই সময় টাকার অভাবে এবং অনিশ্চিত চিকিৎসার কারণে আর চিকিৎসা করাতে পারিনি। তারপর থেকেই ছোটদের মতো করে গোসল করিয়ে দিতে হয়, কাপড় পরানোসহ সব কিছুই করে দিতে হয়।

তিনি বলেন, ওকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে তেমন কোনও সমস্যাই পড়তে হয়নি। এখন অনার্স ভর্তি করে পড়াতে গিয়ে নিজেদের একটু সমস্যা মনে হচ্ছে। অনার্স পড়াতে অনেক খরচ হবে। তবে ওর অনেক ইচ্ছা যে, লেখাপড়া শিখে সরকারি চাকরি করবে। বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেবে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া গেলে নাহিদের ইচ্ছা হয়তো পূরণ হবে। 

নাহিদ হোসেন বলেন, এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিয়েছি। ভর্তির সুযোগ হয়নি। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। হয়তো সেখানে পড়ালেখার সুযোগ পাব। তবে ইতোমধ্যে হরিণাকুন্ডু সরকারি লালন শাহ্ কলেজে মানবিক শাখায় অনার্সে ভর্তি হয়েছি। রাজশাহীতে পড়ার সুযোগ না হলে সেখানেই অনার্স শেষ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্টে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই। সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই। আমি দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা—যুক্ত করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence