বাংলাদেশের খেলা দেখা ‘চোখের জন্য পীড়াদায়ক’
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩৫ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩৫ PM
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে পরাজয় হতাশ করেছে সমর্থকদের। ঢাকার বাড্ডার সৈয়দা মৌ পরিবারসহ ম্যাচ দেখতে বসেছিলেন বেশ আয়োজন করে। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে এতোটাই বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি, যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খেলা চোখের জন্য পীড়াদায়ক’।
সৈয়দা মৌ বলেন, ‘‘অনেক আনন্দ নিয়ে খেলা দেখতে বসি। এরপর দেখি ক্রিকেটাররা না পারে ব্যাটিং, না ভালো বোলিং। শুরুতে ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে এই ক্রিকেটাররা মাঠে নেমে ক্রিকেট শেখেন।’’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের হার দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন, যেটাকে মনে করা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য একটা প্রস্তুতির মঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অক্টোবরে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি তো দূরের কথা সমর্থকরা খেলা দেখে বলছেন, ‘বাংলাদেশ এশিয়া কাপের জন্যই প্রস্তুত না’।
ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে আফগানিস্তানের পেস বোলার ফজল হক ফারুকির ফুলটস বল মেরে ত্রিশ গজও পার করতে কষ্ট হয়েছে নাইম শেখের। প্রথম ওভারে নাইম শেখ যেভাবে ব্যাট ধরেছেন, উইকেটে নড়াচড়া করেছেন মনে হয়েছে তিনি বিশেষ কিছু চেষ্টা করছেন যেটা তার সামর্থ্যের বাইরে।
আরও পড়ুন: আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে টাইগাররা: সাকিব
পরের ওভারেই প্রমাণ মিলেছে, নাইম শেখ শট মেরেছেন বল না বুঝেই। মুজিবের বল সরাসরি স্ট্যাম্পে লেগে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। নাইম শেখের পর দলের অধিনায়ক এবং সবচেয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের একজন সাকিব আল হাসানও একই প্রক্রিয়ায় বোল্ড হন। মাঝে এনামুল হক বিজয় ১৪ বল খেলে ৫ রান করেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট পোর্টাল ক্রিকেট-৯৭ এর সাংবাদিক শিহাব আহসান খান বলেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ লেগেছে প্রবাসী বাংলাদেশি যারা খেলা দেখতে এসেছিলেন তাদের কথা শুনে। অনেকেই ছুটি নিয়ে, এই খেলা দেখতে এসেছেন। তারা দিনের টাকা দিনে পান। একদিনের অর্থ ত্যাগ করে এমন খেলা দেখতে আসা কর্মীদের ক্ষোভটা দেখার মতো ছিল।’’
সমর্থকদের একজন শিহাব আহসান খানকে বলেছেন, ‘তিনি পরের ম্যাচে আর স্টেডিয়ামে যাবেন না, এতে সময় নষ্ট হয়’।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপের আগে, টি-টোয়েন্টি দল থেকে রাসেল ডমিঙ্গোকে সরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ শ্রীধরন শ্রীরামকে নিয়ে এসেছে, সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করেছে, বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘দলের মানসিকতায় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে চান’।
ক্রিকেট সমর্থক সৈয়দা মৌ বলেন, ‘‘বিসিবি বা ক্রিকেটার কারও কথাই আর বিশ্বাস করি না। এসব বলার জন্য বলে’’।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয় অবশ্য এটা পুরোপুরি মানতে নারাজ, তিনি মনে করেন এটা একটা ম্যাচের সমস্যা, তার আঙ্গুল পাওয়ারপ্লের দিকে, ‘বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে ভালো ব্যাট করতে পারেনি এরপর আর সেই পরিস্থিতি থেকে ভালো অবস্থায় যেতে পারেনি।’
বাংলাদেশ দলে যে পাওয়ারহিটার নেই এই কথাও বলেছেন তিনি। নাইমুর রহমান দুর্জয় বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শেখার রাস্তায় আছে। চেষ্টা করছে, কিন্তু মাঠে প্রমাণ না করলে আসলে বলা যাবেনা বাংলাদেশ ভয়হীন ক্রিকেট খেলছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে এই ম্যাচে বাংলাদেশের টিম এনালিস্টের কাছ থেকে দলের কাছে যথাযথ বার্তা যায়নি। তিনি বলেন, টি-টোয়েন্টিতে এই মাঠে সবচেয়ে কম বল ওঠে। এই ধরনের পিচে উইকেটের স্কয়ারে শট খেলা যাবেই না। শুরু থেকেই তারা এসব চেষ্টা করে গেছে, কাট বা পুল, উইকেটের সোজা তারা কোনও শট খেলেনি।
তার মতে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা উইকেটের আচরণ নিয়ে সচেতন ছিলেন, আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা অপেক্ষা করেছে, এবং সোজা শট খেলতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা জানতোই না কোথায় কী করতে হবে।
তিনি বলেন, শারজাহ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ব্যাটসম্যানের ব্যাটের সামনে বল দিলে কোনও মাফ নেই। বাংলাদেশের বোলাররা ১৪-১৫ ওভার পর্যন্ত গুড লেন্থে বল করেছে, কিন্তু এরপর যখন ওপরে যখন বল করলো তখন ভিন্ন ফল এসেছে, আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা সহজেই মারতে পেরেছে।
নাজিবুল্লাহ জাদরান কালকের ম্যাচে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গত তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নেমে ছক্কা হাঁকিয়েছে- ৫টি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিজেদের মধ্যে আইডিয়া শেয়ারিং বা একে অপরকে পরামর্শ দেয়ার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, মুস্তাফিজতো এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে, ওর উচিৎ ছিল সাইফুদ্দিনকে বলা, কোথায় বল করলে ভালো হবে- এসব নিয়ে আলোচনা লক্ষ্য করা যায়নি।
আগামীকাল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে, এই ম্যাচে হারলে ছয় দলের টুর্নামেন্ট শেষ দুই দল হিসেবে বাদ পড়বে বাংলাদেশ।