মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে অমুসলিম শিক্ষার্থী ভর্তিতে আপত্তি অভিভাবকদের

লটারিতে নির্বাচিতরাই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে: কর্তৃপক্ষ

সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রধান ফটক ও অভিভাবকদের ব্যানার
সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রধান ফটক ও অভিভাবকদের ব্যানার  © সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধুমাত্র মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম’-এ। তবে আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অমুসলিম বিদ্যার্থীরাও প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে প্রতিষ্ঠানের জন্মই মুসলিম ছাত্রদের জন্য, সেখানে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা কেন আসবে? তাই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বানও তাদের।

অন্যদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিচ্ছেন তারা। লটারিতে যারাই নির্বাচিত হবে তারাই প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীরা এখানে ‍মুসলিম কিংবা অমুসলিম কিনা তা দেখা হচ্ছে না বলেও নিশ্চিত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে দানবীর হাজি মুহাম্মাদ মহসীন তার সম্পদ থেকে মহসিন তহবিল গঠন করার উদ্যোগ নেয়। শুরুতে তিনি একটি দাতব্য তহবিল এবং পরবর্তীতে মহসিন তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করেন। এই তহবিলের অর্থ শিশুদের শিক্ষাখাতে ব্যয় করার নির্দেশ দেন তিনি। উপমহাদেশে মুসলিম শিক্ষার প্রসার ঘটায় চট্টগ্রাম মহসীনিয়া মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

পরবর্তীতে মহসীনিয়া মাদ্রাসা পরিবর্তিত হয়ে মহসিন উচ্চ বিদ্যালয় এবং গভর্নমেন্ট মহসিন কলেজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে মুসলিম ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মুসলিম নেতাদের অধীনে এবং মহসিন মাদ্রাসার প্রধান তত্ত্বাবধানে ইঙ্গ-ফার্সি বিভাগ চালু করা হয়। ১৯০৯ সালে ওই মাদ্রাসা বিভাগ হতে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়।

শুরুর দিকে পাঠদান কাজ পরিচালনা করা হতো চট্টগ্রামের তৎকালীন স্থানীয় নিবন্ধন অফিস ভবনে। ১৯১৬ সালে বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করে গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই ইংলিশ স্কুল নামকরণ করা হয়। ১৯৫৯ সালে উর্দুভাষী ছাত্রদের জন্যে উর্দু বিভাগ চালু করা হলেও বর্তমানে এর কার্যক্রম নেই।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়টিতে ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। এখানে ভর্তির সুযোগ পায় শুধুমাত্র ছেলে শিক্ষার্থীরা। মুসলিম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় এখানে তাদের জন্য ড্রেসকোডে সাদা শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে সাদা টুপি পরাও বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। এখন থেকে অমুসলিম শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তাদের ড্রেসকোড কেমন হবে— সে বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ আক্তার।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একসময় এই স্কুলে নারী শিক্ষকও ছিলেন না। যেখানে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী শিক্ষক। এটি যেহেতু বর্তমানে সরকারিকরণ করা হয়েছে তাই সব সিদ্ধান্তই সরকারের পক্ষ থেকে আসে। এবার অমুসলিম শিক্ষার্থী ভর্তিও এরই একটি অংশ। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক থেকে শুরু করে সাবেক শিক্ষার্থীরাও। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটি শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত একটি প্রতিষ্ঠান। তাই একজন অভিভাবক হিসেবে অমুসলিম ছাত্রদের ভর্তি না নেওয়া অনুরোধ থাকবে। বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবক ফেসবুকে লেখালেখি করছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিষ্ঠানটির ফটকে অভিভাবক ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে একটি ব্যানার টানিয়ে তাতে লেখা হয়েছে, “চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি লটারিতে অমুসলিম ছাত্রদের অংশগ্রহণের অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় শুধুমাত্র মুসলিম ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত একটি প্রতিষ্ঠান।” 

তবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যা, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার মাধ্যমে সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান আছে। এরই অংশ হিসেবে এই বিদ্যালয়ে এমন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে নগরীর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ফেসবুকে লেখেন, সরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম হবে। নির্ধারিত কোটা, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি, ব্যতীত, কোনো ধর্মের অনুসারী, ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করার সুযোগ নেই। চট্টগ্রামে একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ব্যানার দিয়ে যে দাবি করেছেন, সেটি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং বেআইনি।

তিনি আরও লেখেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে, সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য (মাদ্রাসা ব্যতীত) সকল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে, ভর্তির সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর এবং আইনত বাধ্য। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে যারা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম করার অপচেষ্টা করছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি এক বছরের মতো হবে। এবার আমরা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছি। ভর্তি কার্যক্রম এখনও চলছে। তাই লটারিতে যারাই আসবে, তারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীরা এখানে ‍মুসলিম কিংবা অমুসলিম কিনা তা দেখা হচ্ছে না।

আগে শুধুমাত্র মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল, এবার সবাইকে কি ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যা সিদ্ধান্ত তা মেনে আমরা কাজ করছি। এর বাইরে কোনো কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, আগমী শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারিতে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত ভর্তির সুযোগ পাবেন আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় লটারি পদ্ধতি চালু করে শিক্ষাস্তরটির তদারক সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence