জুমার খুতবা চলাকালীন কথা বলা ও দানবাক্স চালানো কি ঠিক?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৫ PM
আমাদের সমাজে জুমার নামাজের খোতবা চলাকালীন ছোট-বড় অনেকেই অনর্থক কথা বলে থাকেন। এমনকি খোতবা চলাকালীন সময়ে মসজিদের দানবাক্সও ছাড়া হয়। আসলেই ইসলামের দৃষ্টি মতে এটা কি ঠিক? কি বলেছেন রাসূল (সা:)। চলুন জেনে নিই খোতবা চলাকালীন সময়ে কথা বলা ও দানবাক্স চালানোর বিধান।
জুমার নামাযের নীরবতা পালন করে ইমামের খোতবা শুনা ফরজ। অন্যের সাথে কথা বলা নাজায়েয। এমনকি সে কথা যদি অন্যকে চুপ করানোর জন্যে হয় সে কথাও। যে ব্যক্তি এমন কিছু করল সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করল তার জুমা নেই।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 'জুমার দিন ইমাম খোতবাদানকালে আপনি যদি পাশের কাউকে বলেন:‘চুপ থাকুন’ তাহলে আপনি জুমার সওয়াব নষ্ট করে দিলেন।'
অন্য হাদিসে আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খোতবা দিচ্ছিলেন, সে মুহূর্তে একজন বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধায় কাতর। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দুই হাত তুললেন...। তাঁর দুআর ফলে সেদিন বৃষ্টি নামল, এর পরের দিনও বৃষ্টি হল, এর পরের দিন, এর পরের দিনও বৃষ্টি হল, পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকল। সেই জুমাতে একই বেদুইন অথবা অন্য একজন দাঁড়িয়ে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দু হাত তুললেন...[সহিহ বুখারী (৮৯১) ও সহিহ মুসলিম (৮৯৭)]
আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, খোতবা চলাকালে হাঁচির উত্তর দেয়া ও সালামের জবাব দেয়া জায়েয নয়। কেননা হাঁচির উত্তর ও সালামের জবাব কথার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। হাদিসের সাধারণ ভাবের দলিলের ভিত্তিতে খোতবা চলাকালে সব ধরণের কথা বলা নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে অনেক মসজিদে দেখা যায়, জুমার খুতবা চলা অবস্থায় দানবাক্স চলতে থাকে। হাদিস শরিফে খুতবা চলা অবস্থায় যেখানে অন্য কেউ কথা বললেও নিষেধ করাকে অনর্থক কাজ বলা হয়েছে। সেখানে খুতবার সময় দানবাক্স চালানো তো আরও বড় অনর্থক কাজ। সুতরাং তা পরিহার করা জরুরি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে জুমার জন্য মসজিদে এলো, তারপর চুপ থেকে খুতবা শুনলো তার দশ দিনের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে নুড়ি স্পর্শ করলো সে ‘অনর্থক’ কাজ করলো। এখানে এ বিষয়টিও বলে দেওয়া সমীচীন যে, মসজিদ ফান্ডের জন্য দান সংগ্রহ করার এই পদ্ধতি (বাক্স চালনা) কি কোনো আদর্শ পদ্ধতি হতে পারে? এ বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন। অনেকে এ পদ্ধতিকে পছন্দের দৃষ্টিতে দেখেন না। এ জন্য এর উত্তম বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন।
জুমাতে উপস্থিত মুসল্লিদের উপর চুপ থেকে ইমামের খোতবা শুনা ফরজ। ইমাম খোতবা প্রদানকালে কথা বলা নাজায়েয। তবে দলিলের ভিত্তিতে যে কয়টি বিষয় এ বিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে না সেগুলো ছাড়া; যেমন- খতিবের সাথে কথা বলা, কিংবা খতিবের কথা জবাব দেয়া, কিংবা কোন অন্ধকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার মত জরুরী কোন বিষয় ঘটলে। [সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব]