জবিতে যার যত ক্ষমতা তিনি তত দেরী করে আসেন অফিসে

কর্মকর্তার ফাঁকা চেয়ার
কর্মকর্তার ফাঁকা চেয়ার   © টিডিসি ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন দপ্তরের ৮০ ভাগ কর্মকর্তাই নিজস্ব কর্মস্থলে আসেন দেরীতে। অফিসের নির্দিষ্ট সময় সকাল ৮ টায় নির্ধারিত থাকলেও কেউ সাড়ে ৯ টায়, কেউ ১০ টায় আবার কেউ ১১ টায়, কেউবা তার পরে উপস্থিত হোন অফিসে। তাদের ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেই চলে যায় অফিসের ২-৪ ঘন্টা সময়। এটা যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী৷ তাই বলা চলে দপ্তরে যার ক্ষমতা যতো বেশি, তার ঘুম ভাঙ্গতে সময় লাগে তত বেশি সময় লাগে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় দপ্তরের প্রধানরাও রয়েছেন এ তালিকায়। 

যারা সঠিক সময়ে অফিসে আসেন তারা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, অফিসে যোগদানের হাজিরায় আধুনিক সিস্টেম (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) না থাকায় কে কখন আসেন বা যান তার কোন সঠিক হিসাব থাকে না। এছাড়া অনেকে চলে যান নির্ধারিত সময়ের (বিকাল-৪ টা) আগেই। এতে বিভিন্ন দপ্তরে ফাইল জমা হয়ে যাওয়ায় কাজের এক ধরণের আমলাতান্ত্রিকতা দেখা যায়। যার ফলে নানা কাজে হয়রানি হয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে  ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। 

বৃহস্পতিবার (সর্বশেষ কার্যদিবসে)সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০ টা বেজে গেলেও ট্রেজারার দপ্তরে  পিএস আমিনুল ইসলাম অফিসে আসেননি। সেখানকার অন্যান্য কর্মচারীরা জানান, তিনি এখনো অফিসে আসেননি। একইভাবে রেজিস্ট্রার দপ্তরে গেলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাহানা আক্তারকে ৯ টা ৫০ মিনিটে, সহকারী রেজিস্ট্রার সিরাজুল হক শরীফকে ১০ টা ২ মিনিটে, সহকারী রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান মিঠু ও কামরুল হককে ১০ টা ১৮ মিনিটে, সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামাল হোসেন সরকারকে (সাবেক কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি) ১০ টা ২২ মিনিটে অফিসে পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ অফিস সময়ের ২ থেকে আড়াই ঘন্টা চলে গেলেও অফিসে হাজির হননি তারা। 

আরও পড়ুন: ৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গেলে সেকশন অফিসার আবু ইমরানকে ১০ টা ৪০ মিনিটে ও সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুল মালেককে তারও ১০ মিনিট পরে প্রায় ৩ ঘন্টা দেরি করে অফিসে আসতে দেখা যায়। অন্যদিকে একই দপ্তরের একই রুমে সকাল ১১ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাকসুদুর রহমান সাগর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার শাহিদুল ইসলাম শামীম, কে এম আল আমিন, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নির্মলেন্দু বিশ্বাস, সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) হিমাদ্রী শেখর মন্ডল ও সেকশন অফিসার পুলক চন্দ্র ঘরামীকে অফিসে আসতে দেখা যায় নি। 

New Project - 2022-08-28T132839-688

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার এবং পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দুই দপ্তর প্রধানকেও দেরিতে আসতে দেখা যায়। মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মিতা শবনমকে ১০ টা ১৮ মিনিটে ও পরিকল্পনা দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনকে ১১ টা ২০ মিনিটেও অফিসে আসতে দেখা যায় নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে অভিযোগ করেন, মেডিকেল সেন্টারে মাত্র দুজন মেডিকেল কর্মকর্তা রয়েছেন। তার মধ্যে একজন যদি ২ থেকে ৩ ঘন্টা দেরিতে আসেন, এতে অনেকে কাঙ্খিত  সেবা থেকে বঞ্চিত হন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের গ্রন্থগারিক এনামুল হক, অর্থদপ্তরের সহকারী পরিচালক সঞ্জয় কুমার পাল (১০ টা ৩০ মিনিটে অনুপস্থিত), পরিকল্পনা দপ্তরের উপপরিচালক নায়লা ইয়াসমিনসহ বিভিন্ন ডিন অফিসের কর্মকর্তা, প্রকৌশল দপ্তর, ছাত্রকল্যান দপ্তর ও পরিবহন পুলে অনেককে দেরিতে আসতে দেখা যায়। এছাড়া বিশেষ করে দুপুরের পর নানা দপ্তরের কর্মকর্তাদের বাসায় চলে যেতে দেখা যায়। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার ভালো হওয়ায় অনেকে এ সুবিধা নেন। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে বেলা ১১ টায়ও অফিস সব ফাঁকা দেখা যায়। বিশেষ করে যারা ক্যাম্পাসের পাশেই থাকেন, তাদের ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হয়। এছাড়া যারা যে দপ্তরে ক্ষমতাশালী, রাজনীতি করেন তারাই দেরি করে আসেন। অথচ কেউ তাদের কিছু বলেন না।  আজ (গত বৃহস্পতিবার) যারা হাজির তারাও অন্যান্য দিন দেরি করে আসেন। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ ভাগ কর্মকর্তা দেরিতে আসেন।

এদিকে দেরি করে আসা কয়েকজন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জরুরী কাজে শুধু একদিন দেরি হয়েছে। অন্যান্যরা আজ হয়তো হাজির থাকলেও, অন্য দিন দেরি করে আসেন। এছাড়া আমরা দেরি করে আসলেই দোষ। শিক্ষকরাও দেরি করে আসেন। 

New Project - 2022-08-28T132913-905

এবিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বলেন, কোন কর্মকর্তা কখন আসেন এটা দেখবেন ওই দপ্তরের প্রধান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরায় আধুনিক সিস্টেম ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবস্থা চালু থাকলে কেউ দেরি করে আসার সুযোগ পাবে না। 

এছাড়া সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, অফিস সময় সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত। দেরি করে আসার সুযোগ নেই। যারা দেরি করে আসেন তাদের ‘মোটিভিশন’ দেয়া জরুরী। এছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রয়োজনে হাজিরার জন্য আধুনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা আলোচনা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence