জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জিপিএ’র শর্ত বাড়ানোয় লাভবান হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী   © ফাইল ফটো

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদনের জিপিএ’র শর্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে কম জিপিএ প্রাপ্তরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ঝুঁকবে। ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। 

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক- এই তিন ইউনিটেই ভর্তিতে জিপিএ’র শর্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবার মানবিকে আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসিতে ৩ দশমিক ৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৩ পেতে হবে। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পেতে হবে। গত শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসিতে ৩ ও এইচএসসিতে ২ দশমিক ৫ পেয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারতেন। আর মানবিক বিভাগে এসএসসিতে ২ দশমিক ৫ ও এইচএসসিতে ২ দশমিক ৫ পেতে হত।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জিপিএ’র শর্ত বাড়ানোর আড়ালে কৌশলে শিক্ষার্থীদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামাঞ্চলের অধিভুক্ত কলেজগুলো। এছাড়া যাদের অভিভাবক স্বল্প খরচে সন্তানদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার স্বপ্ন দেখছেন তাদের সেই আশাও পূরণ হবে না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ভর্তিতে জিপিএ বাড়ানোর তিনটি কারণ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, গত ৭/৮ বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিসংখ্যান থেকে তারা জেনেছেন যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-৪ প্রাপ্তরাই কেবল ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এসএসসি ও এইচএসসিতে যারা আলাদাভাবে জিপিএ ৪ কিংবা এর বেশি পেয়েছে কেবল তারাই ভর্তির সুযোগ পায়। এর কম জিপিএ প্রাপ্ত কেউ ভর্তির সুযোগ পায় না। তাই এবার জিপিএ’র শর্ত বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি: আইসিটি বাদ দিতে তথ্য সংগ্রহ

যেহেতু কম জিপিএ প্রাপ্তরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না; সেহেতু এই শিক্ষার্থীরা শুধু আবেদন করছে। আবেদনের ফলে তাদের একটা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই অর্থের যেন অপচয় না হয় সেদিকটি বিবেচনা করে জিপিএ’র শর্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া অনেকেই অভিযোগ করেন— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় না। এখানে কেবল কম জিপিএ প্রাপ্তরাই ভর্তি হয়। শিক্ষাবিদ এবং সাধারণ মানুষ যেন এই অভিযোগ আর না করতে পারেন সেজন্য আবেদনের যোগ্যতা বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন (শিক্ষা)ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক নাসির উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের এখানে কম জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির প্রবণতা খুবই কম। আমাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে জিপিএ-৪ এর নিচে পাওয়া কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। তাহলে আমরা অহেতুক কেন তাদের আবেদন করতে বলবো? আবেদনের একটি ফি লাগে। এই অর্থ জোগাড় করতেও অনেক পরিবাবের কষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য আমরা জিপিএর শর্ত বাড়িয়েছি।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জিপিএ’র শর্ত বাড়ানোয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা। এতে করে এই কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হবে তাদের। আবেদনের যোগ্যতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অনার্স পর্যায়ের নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জিপিএ শর্ত শিথিলের দাবি

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও সমীচিন হয়নি। কেননা প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলোতে কম জিপিএ প্রাপ্তরা ভর্তি হন। সেটি কমে গেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেননা অনার্স পর্যায়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়েই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার।