সাত কলেজ
হাতে প্রশ্ন উত্তর জানা, লিখতে শুধু সময়ের মানা
- ইলিয়াস শান্ত
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:২৭ PM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে একাধিক বর্ষের স্থগিত পরীক্ষা শুরু হয়। করোনা সংক্রমণরোধে এসব পরীক্ষার সময় অর্ধেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। ৮০ নম্বরের ৪ ঘণ্টার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে ২ ঘণ্টায়। তবে সময় কমলেও সে অনুপাতে প্রশ্নের সংখ্যা কমানো হয়নি।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা আগে যেখানে ৪ ঘণ্টায় ৮০ নম্বরের উত্তর করতেন সেখানে তাদের এখন ২ ঘণ্টায় একই নম্বরের উত্তর করতে হচ্ছে। সময় কমানোর সাথে সাথে প্রশ্ন না কমানোর কারণে তারা সবগুলো প্রশ্ন পারা সত্ত্বেও উত্তর লিখে শেষ করতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রশ্নও লেখার মতো হচ্ছে। কিন্তু তারা সময়ের অভাবে লিখতে পারছেন না। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সালমা নূর নাবিল বলছেন, ‘‘সবগুলো প্রশ্ন কমন পড়লেও লিখতে না পারা অনেক কষ্টের।’’
সরকারি তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের তারেক মাহমুদ বলেন, পরীক্ষার দেড় মাস আগে বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে পড়াশোনা শুরু করেছি। প্রশ্নও মোটামুটি ভালোই কমন এসেছে। কিন্তু সময় পরীক্ষাটা আমার মতো করে দিতে দিলো না। ২ ঘণ্টা পরীক্ষা নিতে পারলে ৪ ঘণ্টা না হোক অন্তত ৩ ঘণ্টা নিলেও পরীক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো হতো।
পড়ুন: হলে যাওয়া ছাড়া ‘প্রশ্নের ধরন-মানবন্টন’ জানতে পারছে না শিক্ষার্থীরা
বাঙলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন রহমান বলেন, এ প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা যেতে পারে; তবে ভালো সিজিপিএ পাওয়া সম্ভব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগের সময়ের ফলাফল দেখে সেটিই বোঝা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে কাউন্ট করে না।
তবে শাহিনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ইডেন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুফিয়া আক্তার। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র যেভাবে হোক আমরা শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা দেখছি না। আমাদের শিক্ষকরা তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বলছি, প্রশ্ন যেভাবে হোক তোমরা তোমাদের মত করে উত্তর করবে; নম্বর দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।
পড়ুন: ৪০ মার্কের প্রস্তুতি, পরীক্ষা হলো ৮০ নম্বরের
অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে চলতি মাসের ২ তারিখ। অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে চলতি মাসের ৪ তারিখ। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরের ০৯ তারিখ থেকে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এসব ব্যাচ-ইয়ারগুলো প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের কাছে একই ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে।
ইডেন মহিলা কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা ফারিহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছি, নতুন সব বিষয় নিয়ে পড়ছি। নতুন মানবণ্টনে পরীক্ষা দিচ্ছি। আগের ৪ ঘণ্টায় ৮০ নম্বরের পরীক্ষা এখন মাত্র ২ ঘণ্টায় দিচ্ছি। প্রশ্নও বেশ মানসম্মত এবং মন মতোই হচ্ছে। অথচ সময় স্বল্পতার কারণে উত্তর লিখতে পারছি না।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেছেন। ইডেন কলেজের ছাত্রী নয়ন মনি তার বন্ধুদের নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে তার অভিযোগের কথা জানান। মনি বলেন, আমরা কয়েকজন গিয়ে আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে পরীক্ষার প্রশ্ন কমাতে বা এক প্রশ্নের ভেতর তিন প্রশ্ন ঢুকিয়ে না দিতে অথবা সময় বাড়িয়ে দিতে বলেছি।
তবে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের অভিযোগ এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
পড়ুন: সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৯ অক্টোবর
তিনি বলেছেন, সাত কলেজের স্নাতক পরীক্ষার সময় অধ্যক্ষদের সাথে বসে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কোন সমস্যা হয় তবে তা সাত কলেজের অধ্যক্ষদের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসতে হবে।
কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করলেও ইতিমধ্যে পদার্থবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার মানববন্টনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞারের পরিবর্তীত সময় অনুযায়ী অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা-২০২০ এর পরবর্তী সকল পরীক্ষা ১.৩০ মিনিটের পরিবর্তে ২ ঘণ্টা করা হয়েছে।
এছাড়া হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ৮টি প্রশ্ন থেকে ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় থাকবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। প্রশ্নের মান হবে ৭৫। তবে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ সেশনের অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন শিক্ষার্থীদের ৮টি থেকে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় থাকবে ২ ঘণ্টা। প্রশ্নের মান হবে ৮০।
সার্বিক বিষয়ে সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনার কারণে পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে আমাদের অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত হতে হবে যেন প্রশ্ন যেভাবেই হোক তারা উত্তর করতে পারেন। এটি নিয়ে অভিযোগের কিছু নেই।