জবির নতুন ক্যাম্পাস

জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, পুনরায় দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ

জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, পুনরায় দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ
জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, পুনরায় দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ  © ফাইল ফটো

‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯২০ কোটি ৯৪ লাখ বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৯ সালে আটশত ৯৯ কোটি ৮০ লক্ষ ৪৯ হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮৮.৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১৪৪১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ে ১৪৪১ কোটি টাকার মধ্যে ৫৪১ কোটি কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা জানাতে পারেনি প্রকল্প কর্মকর্তারা। এছাড়া কেরাণীগঞ্জে ক্যাম্পাস স্থাপনে সিদ্ধান্ত পাঁচ বছর পার হলেও এখন জমি অধিগ্রহণ ছাড়া কিছুই হয়নি। এছাড়া নির্দিষ্ট কোম্পানীকে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ দিতেও অনিয়ম করা হয়েছে।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নির্মাণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহি পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কেরানীগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের ঘোষনা দেন।

পরে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের পর বর্তমান ক্যাম্পাসের সমূদয় সম্পত্তি সরকারের নিকট হস্তান্তরের ভিত্তিতে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়।

এসময় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯২০ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকার ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহন, ভূমি উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন নির্মান, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, লেক খনন, পুকুর খনন, ঘাট নির্মান,সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীন সারফেস ড্রেন নির্মান ও মাস্টার প্লানের কাজ করতে হবে।

কিন্তু নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের ঘোষণার পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৮৮.৪ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। ২০০ একরের ক্যাম্পাসের এখনও ১১.৬ একর জমি অধিগ্রহণ বাকি। মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি, নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ নিদির্ষ্ট কোম্পানীকে দেয়ার পায়তারায় অনিয়ম ও করোনাকালীন সংকটে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোন কাজই হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফায় ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য ২৯ কোটি ৫৮ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে জিওবির অর্থায়নে মাস্টারপ্ল্যান এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খাতে ৩০ কোটি টাকা রাখা হয়। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তির পর ২১ মার্চ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ইওআই গ্রহণ করে। ৩০ নভেম্বর প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আরএফপি এর চাহিদা অনুযায়ী টেকনিক্যাল ও ফিনান্সিয়াল প্রস্তাব দাখিল করে।

এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেডের কারিগরি মূল্যায়নে সর্ব্বোচ্চ স্কোর অর্জন করে এবং তাদের সেবার মূল্য ৪ কোটি ৮ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের পরামর্শে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানর আরবানাকে ২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিয়োগে সুপারিশ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় আরেকটি প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্স লিমিটেড ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় সেবার মূল্য নির্ধারণ করে।

গত ১১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ আর্থিক বার্ষিক কর্মসূচির সভায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়ণের জন্য ক্রয় প্রক্রিয়া পিপিআর অনুযায়ী না হওয়ায় বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়নি। মন্ত্রনালয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুােরধ করলে পিপিআর এর ব্যত্যয় উল্লেখ করেন। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কম্পোনেট এর ইআইও আহ্বান করেন।

বিষয়টি বিব্রতকর উল্লেখ করে সভায় ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য এবং পিপিআর অনুযায়ী ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও আরবানা কোম্পানীকে সিঙ্গেল চয়েজের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। ২০২১ সালের ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক যোগদানের পর মাস্টারপ্ল্যানের কোম্পানী নিয়োগে জটিলতা ও অনিয়মের কারণে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করেন। গত ২৩ আগস্ট মাস্টারপ্লানের জন্য পূনঃদরপত্র আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগে বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি মাস্টারপ্ল্যানের চিত্র উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই মাস্টারপ্ল্যানের চিত্র বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনও করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারেও এর একটি ডিজাইনও প্রকাশ করা হয়। এই মাস্টারপ্ল্যানটির ডিজাইন নিয়োগের আগেই আরবানা প্রতিষ্ঠান থেকে করে নেয়া বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পন, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপন করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ সভায় কারা উপস্থিত ছিলেন আর কাদের তৈরি করা ডিজাইনটি ছিল সে বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।

জমি ক্রয়ে নয়ছয়

বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণে জমি সিলেকশনেও নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ২৩০ একর জায়গা অধিগ্রহণের অনুমতি দেয় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পর্যন্ত ১৮৮.৪ একর জায়গা অধিগ্রহন করেছে। এ জমি সিলেকশনে জমির মান নির্ধারনে অনিয়মের অভিযোগ আছে।

জমির মালিকরা জানান, কেরাণীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পক্ষ জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে অনেকের কাছে জমি ক্রয় করেন। রাতের আধারে প্রভাবশালীদের খাল ও নিচু জমিতে পাশের ভালো জমি থেকে মাটি কেটে ভরাট করা হয়।

তাছাড়া নালা ও খাল দুই শ্রেণীর জমি সিলেকশনেও নয়ছয় করা হয়েছে। এ নিয়ে জমির মালিকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সাথে দেখা করেন। কিন্তু কোন সমাধান আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য আরও ১১.৬ একর জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্তের সাথে সাথে নির্ধারিত জায়গায় কেরানীগঞ্জ উপজেলার শাহীন চেয়ারম্যানের দুই ভাই ফারুক ও শিপু তড়িঘরি করে বিভিন্ন ফার্ম ও বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেছে।

নতুন ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের কাজের মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্রে জটিলতা ছিল। আগের পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। কাজ দ্রুত করার জন্য ইউজিসি, মন্ত্রনালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিক বৈঠক করেছে।

প্রকল্পের অর্থ কোন কোন খাতে ১৪৪১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন বলেন, এত টাকা ব্যয় হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের তথ্য ভুয়া। এ ব্যয়ের হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাংবাদিকরা তথ্য অধিকার আইনে তিন মাস আগে চাইলেও বিশবিদ্যালয় প্রশাসন সে হিসাব দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলী হেলালউদ্দিন বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের দরপত্র অনুমোদনের অপেক্ষায়। দ্রুতই সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু হবে। লেক নির্মানের দরপত্র জমা হয়েছে। আর মাস্টারপ্লানের জন্য পূন:দরপত্র দুই একদিনের মধ্যে দেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence