চূড়ান্ত পরীক্ষার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় খুবি শিক্ষার্থীরা
- খুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২১, ০২:৩২ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১, ০২:৩২ PM
'চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে না পারায় ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছি। এমতাবস্থায় কর্মক্ষেত্রে যোগদানের ও সুযোগ নেই কেননা স্নাতক শেষ হতে এখনো এক সেমিস্টার বাকি রয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বসে আছি। আর কত অপেক্ষায় থাকবো? অনলাইন কিংবা অফলাইনে যেকোনো ভাবেই হোক চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে চাই।' এভাবেই নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার আহমেদ।
ইউজিসি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই হিসাবে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে কিন্তু করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। আবার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনেও পরীক্ষা চলছে।
এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত কোন ধরনের সিদ্ধান্ত যেন অতিদ্রুত নেওয়া হয় এমনটাই দাবি জানিয়েছেন। কেননা অনেকেই মানসিকভাবে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছেন পরীক্ষা না দিতে পারা ও পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায়।
কিছু ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ হওয়ায় এখন আর নিয়মিত ক্লাস ও হয় না। আবার বাকি কিছু ডিসিপ্লিনের সিলেবাস ৮০/৯০ ভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে ক্লাস বন্ধ আছে। এখন আবার নিয়মিত রিভিউ ক্লাসের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সকল চূড়ান্ত পরীক্ষা একইসাথে অনুষ্ঠিত হয়।এবং পরীক্ষার আগে পিএল দেওয়া হয় যেন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। ইতিমধ্যে দুই বার মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা সশরী নেওয়া হলেও ওই সময় করানোর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে আবাসিক হল না খোলা সাপেক্ষে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয় এবং সেখানে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীরা হল না খুলে পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে একাডেমিক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভস্ট ও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবাসিক হল খোলা সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সর্বশেষ গত ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন এর সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭২ তম সভায় উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনায় সরকার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন ব্য্যবস্থা হিসেবে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জানা যায়, চলতি জুলাই থেকে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে যেসব ডিসিপ্লিনের প্রথম টার্মের কিছু অংশ বাকি আছে তা সম্পন্ন করতে এবং অনলাইনে দ্বিতীয় টার্ম রেজিস্ট্রশন করার চলতি জুলাই থেকে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে যেসব ডিসিপ্লিনের প্রথম টার্মের কিছু অংশ বাকি আছে তা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এরপর অনলাইনে দ্বিতীয় টার্মের কোর্স রেজিস্ট্রেশন করেই নিয়মিত ক্লাসে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। ওই সিদ্ধান্তনুযায়ী সকল ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস এ বছরের শেষ হওয়ার দিকে তবে কিছু ডিসিপ্লিনের ১০/২০ ভাগ সিলেবাস বাকি রয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যাপারে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আসলেই সিলেবাস শেষ হয়ে যাবে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যাপারে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অনলাইনে পরীক্ষার নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেলেই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
আইন ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আর কতদিন এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এই অবস্থার শেষ কোথায়। সশরীরে সম্ভব না হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়েছে। আমাদের প্রশাসন দীর্ঘদিন পরে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কোন কাজ করলো না। মনের মধ্যে আশা জেগেছিল এবার হয়তো হতাশা থেকে একটু মুক্তি মিলবে কিন্তু তা আর হলো কই! মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হচ্ছে। আর মোটেও বিলম্ব না করে অতিদ্রুত প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা হোক।