ইসলাম গ্রহণ নিয়ে যা বললেন জবির সেই শিক্ষিকা

জবির লোগো ও রিতা কুন্ডু
জবির লোগো ও রিতা কুন্ডু  © সংগৃহীত

‘আমি বলব পূর্ণাঙ্গ মানবতার সংজ্ঞা রয়েছে ইসলামের বিধানে, আমি ইসলামের মাঝেই সর্বোত্তম মানবতা খুঁজে পেলাম। এখান থেকেই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত’— এভাবে নিজের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাখা করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিতা কুন্ডু। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

রিতা নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক ছিলেন। এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক।

ইসলাম ধর্মের পথে যাত্রা শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ যাত্রা আসলে খুব অল্প দিনের বা অল্প সময়ের নয়, খুব ছোট থেকেই আল্লাহ আমাকে ইসলাম কবুলের জন্য তৈরি করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ঘটনা, শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা আর সমাজের অসঙ্গতি আমাকে ধীরে ধীরে ইসলামের পথে পরিচালিত করেছে।’

রিতা কুন্ডু বলেন, ‘সমাজ ও পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত ছোট ছোট বিষয়গুলো আমাকে সবসময়ই ভাবিয়েছে। প্রতিটি কাজের যৌক্তিক ব্যাখ্যা অন্বেষণের চেষ্টা করেছি সবসময়। যখন ব্যাখ্যা খুজেঁ পাইনি বা সম্পূর্ণভাবে আস্বস্ত হতে পারিনি সেই বিষয়গুলো পালন করা বা মেনে চলা থেকে বিরত থেকেছি। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রচন্ড নেশা ছিল। স্কুলের বয়স থেকেই দুই বাংলার উল্লেখযোগ্য সকল লেখকের বই পড়েছি। শুধু যে পড়েছি তা নয়, সেই লেখার মাঝে তৎকালীন সমাজের যে চিত্র ফুটে উঠতো তা পূঙ্খানুপূঙ্খ বোঝার চেষ্টা করেছি। এভাবেই সমাজ ও ধর্মকে একাত্ম করে পড়ার প্রথম পাঠ শুরু হয়। আমি বলবো মাইকেল, রবীন্দ্র, রামমোহ্‌ ঈশ্বরচন্দ্র যুগের সাহিত্য ও জীবন আমাকে প্রথম ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে ভাবতে আগ্রহী করে তোলে। সেখান থেকেই আমার মাঝে যুক্তিভিত্তিক ধর্ম অন্বেষনের একটা ঝোঁক তৈরি হয়।’

রিতা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পড়ার সুবাদে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা আর তা সমাধানের সাথে পরিচিত হতে থাকি, এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে থাকা বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ধর্ম দর্শন নিয়ে লেখা বইগুলো পড়ার চেষ্টা করি। সে সময় ধীরে ধীরে নাস্তিক্যবাদের দিকে চলে যেতে থাকি। আসলে তখনও ইসলাম  নিয়ে কোনো লেখাপড়া করার সুযোগ বা আগ্রহ কিছুই তৈরি হয়নি। তখনও ইসলাম মানেই আমার কাছে ছিল একটা বিদ্বেষের নাম। আমার কাছে মানবধর্মই প্রকৃত আর বাকিগুলো মানুষের প্রয়োজনে মানবসৃষ্ট বলে মনে হতে থাকে। আমি সেভাবেই জীবনযাপন শুরু করি। তবে একেবারে স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হতে পারলাম না। অন্তরের কোথাও একটু রয়ে গেল এত সুন্দর পৃথিবী আর এত সুন্দর মানবজীবন, এত নিখুঁত মহাবিশ্বের পেছনের কারিগর নিশ্চই আছেন। আমি বরাবরই শিল্পের প্রতি অনুরুক্ত। তাই এই বিশ্বজগত সৃষ্টির সুনিপূণ শিল্পীকে অন্বেষণের আশা হৃদয়ে রয়েই গেল। সমস্ত ধর্ম ত্যাগ করে মানবধর্মে দিক্ষীত আমি চেষ্টা করতে থাকলাম ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার। এ পর্যায়েই ধীরে ধীরে ইসলামের আদর্শের দিকে (মুসলিমের দিকে নয়) অগ্রসর হই। ইসলামের বিধানের ভেতরে থাকা মানবতা আমাকে স্বয়ংসম্পুর্ণ জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত পরিচিত করিয়ে দিতে থাকে। আমি বলব পূর্ণাঙ্গ মানবতার সংজ্ঞা রয়েছে ইসলামের বিধানে, আমি ইসলামের মাঝেই সর্বোত্তম মানবতা খুজে পেলাম।এখান থেকেই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত।’

সহকারী অধ্যাপক রিতা কুন্ডু আরও বলেন, ‘ইসলামের যে বিষয়গুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত করে, নির্ভার করে তা হল ইসলামের প্রতিটি বিধান একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম জীবনে রূপান্তরিত করে দিতে থাকে। এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস, আত্মসমর্পণ এক অপুর্ব মানসিক প্রশান্তির খবর দেয়। একজন সৃষ্টি যেকোনো অবস্থান থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে তার স্রষ্টার সাথে অর্থাৎ আল্লার সাথে আত্মিকভাবে যুক্ত হতে পারে, কারও মাধ্যম বা বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না। এখানে ধনী গরিব, উচু নিচু জাতভেদের কোনো অবস্থান নেই। আমরা সর্বদা যে সাম্যবাদী সমাজের কথা বলি ইসলামি জীবন সে সাম্যবাদেরই শিক্ষা দেয়। ইসলাম খুব শক্তভাবে গরীবের হক আদায়ের কথা বলে। যাকাত ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বন্টন যা সমাজের পশ্চাদপদ মানুষের জীবনে প্রত্যক্ষ উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম। ইসলামে মা-বাবাসহ সকল আত্মীয়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ আছে। আমি অমুসলিম জীবন যাপনে দেখেছি আত্মীয়তার সম্পর্কের টানাপড়েনে। সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান ব্যক্তি ও সমাজকে স্থিতিশীল করে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা বলেন, ‘এটা সত্য ইসলামের বিধান রয়েছে, কিন্তু জীবনে এর প্রয়োগ কমে গেছে বলেই আমাদের চারপাশে সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। একারনেই ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব রয়েছে। আমি মনে করি এটা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব যে, সে সত্যের পথে অন্যকে আহবান করবে। আর এ দাওয়াতে কোন জোর জবরদস্তী নেই, বিদ্বেষ নেই। ইসলাম কোনভাবেই কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণের কথা বলে না তা সে যে ধর্মেরই হোক। কিন্তু সকলের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার কথা বলে। আর এজন্য প্রয়োজন ইসলামকে অন্তর দিয়ে ধারণ করা। নিজেকে ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে যেন আমাদের জীবনব্যবস্থা হতাশাগ্রস্থকে আশান্বিত করে তোলে রবের প্রতি।’


সর্বশেষ সংবাদ