কুবির ডিবেটর সার্চ প্রতিযোগিতা, মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার স্বাদ

  © টিডিসি ফটো

মহান জাতীয় সংসদ। উপস্থিত রয়েছেন সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি। সভাপতিত্ব করছেন মহান সংসদের স্পীকার। দু’দলই নির্ধারিত বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছে। সরকারি দলের ভূমিকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং বিরোধী দলের ভূমিকায় আইন বিভাগ।

গত রোববার (২৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হওয়া ৪র্থ সার্চ ডিবেটর প্রোগ্রামের ফাইনালে দু’দলই সমানতালে তাদের যুক্তি তুলে ধরছেন। বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘এই সংসদ মনে করে যে, সংকট স্বাস্থ্যসেবার নয় বরং স্বাস্থ্য সচেতনতার।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত সংসদীয় এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৫টি বিভাগ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যেশ্য ছিল নবীণ বিতার্কিক খুজে বের করা। প্রতি বছরই ডিবেটিং সোসাইটি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় শুধুমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এবারের প্রতিযোগিতার ফাইনালে সাংবাদিকতা বিভাগকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নেয় আইন বিভাগ। অপরাজিত থেকেই তারা শিরোপা জিতে নেন। প্রতিযোগীরা বিশ^বিদ্যালয়ের মঞ্চে একেবারেই নবীণ। তাইতো শিরোপা জয়ের প্রাপ্তিটা হয়তো একটু বেশিই। দলগত পরিশ্রম আর মেধার গুণেই তাদের সফলতা।

৪র্থ ডিবেটর সার্চ প্রোগ্রামে আইন বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অপু। ছোট থেকেই বিতর্কের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার। গল্প হয় অপুর সাথে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন টিভিতে বিতর্ক দেখতাম, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করছে। তখন খুব ঈর্ষা হতো। মনে হতো, ইশ আমিও যদি অংশগ্রহণ করতে পারতাম।’

৭ম শ্রেণী থেকেই বিতর্কের হাতে-খড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেই গত বছর এ আসরে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের দেখা পান। হন চ্যাম্পিয়ন। এটিই ছিল তার প্রথম কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ। আর এবারও পেলেন শ্রেষ্ঠত্বের পদক।

পুরো প্রতিযোগীতায় অপুকে সঙ্গ দিয়েছেন দ্বিতীয় বর্ষের ধ্রুব চন্দ্র বিশ্বাস এবং প্রথম বর্ষের আহমেদ উল্ল্যাহ রাফী। ধ্রুব’র স্কুল-কলেজে বিতর্ক করার লোভ থাকলেও প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা না থাকায় বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আর অপেক্ষা করতে হয়নি। শুরুতেই যুক্ত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাথে।

জীবনের প্রথম কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেই পেলেন সাফল্যের দেখা। কিছু সময়ের জন্য হলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করাকে সৌভাগ্য বলেই মনে করছেন তিনি। তিনি উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করা হয়, তখন সত্যিই অদ্ভূত এক ভালোলাগা কাজ করে। অন্তত এক ঘন্টার জন্য হলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার স্বাদ পাচ্ছি।’

দলের আরেক সদস্য রাফি। ফাইনালসহ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের প্রতিটি পর্বেই সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছেন। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে ছিনিয়ে নিয়েছেন অন্তত এক ডজন পুরস্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে জাতীয় বিতর্কেও অংশগ্রহণ করেছেন।

তার মতে, বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুল এবং কলেজে বাধ্যতামূলক বিতর্ক ক্লাব চালু করা দরকার। যাতে শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে নতুন প্রজন্ম যুক্তির মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারবে।

দলের তিনজনের লক্ষ্যই এক। স্বপ্ন দেখেন আইনজীবী হওয়ার। তবে বিতর্কের ভালোবাসায় সিক্ত থাকতে চান সবাই। যে যেখানেই থাকেন তাদের উদ্দেশ্য, যুক্তির মাধ্যমে দেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। আইন বিভাগের এ শিরোপা জয়ের পেছনে ছিল আরকজনের অবদান।

টুর্নামেন্টজুড়ে আইন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে ছিলেন বিভাগটির ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো: তরিকুল ইসলাম। জয় ছিনিয়ে আনা একটু কঠিন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা গত বছরও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম সেজন্য একটু চাপ ছিল। তবে প্রত্যাশা ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। আর ছোটরা ঠিকই ট্রফি ছিনিয়ে এনেছে।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি’র ভিন্নধর্মী এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক তানভীর সাবিক বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্বদ্যিালয়ে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বিতর্কের সেশন চলে। এছাড়া জাতীয় প্রতিযোগিতায় আমাদের সোসাইটির সফলতা বাড়ছে।’

তবে অনেক প্রাপ্তির পরেও নানান প্রতিকুলতার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নির্ধারিত কোন আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় না। বিতর্কের জন্য কোন কক্ষ বরাদ্দ নেই।’ এসব অপ্রপ্তি দূর হলে ডিবেটিং সোসাইটি আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ