আন্দোলনে ক্লান্ত সাধারণ কর্মচারীরা, মাঠ ছাড়তে বাধা নেতাদের

ব্যক্তিগত স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নেতারা। কিন্তু নীতিমালার বিষয়ে না বুঝেই তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ কর্মচারীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু সাধারণ কর্মচারীর সাথে আলোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

গত ১৭ জুন থেকে দুই দফা দাবিতে কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে বেরোবি কর্মচারীরা। দাবি দুটি হলো- তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর নীতিমালা প্রণয়ন এবং সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ৫৮ কর্মচারীর তৎকালীন ৪৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ। এদুটি দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও তৃতীয় শ্রেণির কিছু সংখ্যক কর্মচারী কর্মকর্তা হওয়ার দাবি জুড়ে দেয় আন্দোলনে। মূল দাবি দুটির বিষয়ে প্রশাসন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কর্মচারী নেতারা তাদের নিজেদের দাবীর স্বার্থে কর্মচারীদের আন্দোলন থেকে সরে আসতে দিচ্ছে না।

সাধারণ কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন আন্দোলন চলায় তারা এখন বিরক্ত। তাদের মূল দাবি বকেয়া পরিশোধ ও নীতিমালা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হলেও নেতাদের চাপে আন্দোলন থেকে সরতে পারছে না। কয়েকজন সাধারণ কর্মচারী জানান, প্রায় এগারোই বছর পর বর্তমান প্রশাসন কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়ন করলেও কর্মচারী নেতারা সেটির বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। তারা নিজেরাও নীতিমালার বিষয়ে পরিষ্কার না। তবে আন্দোলনে যেতে হচ্ছে নেতাদের চাপে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের আপগ্রেডেশনের পর বেতন নির্ধারণের বিষয়ে গ্রেড অনুযায়ী বেতন কমে যাবে বলে বুঝানো হয়েছিলো। কিন্তু নীতিমালায় যে পে-প্রোটেকশনের বিষয় আছে সেটি নেতারা আমাদের এতোদিন বলেননি। আমরা মনে করি তৃতীয় শ্রেণির কিছু কর্মচারী নিজেদের স্বার্থে আন্দোলনে আমাদের ব্যবহার করছে।’

এছাড়াও কর্মচারীদের আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য নেতারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং জোরপূর্বক আন্দোলনে টানছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মচারী জানান, তারা আন্দোলনে যেতে না চাইলে নেতারা দপ্তরে এসে গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে অপমান-অপদস্ত করে। একারণে বাধ্য হয়ে শুধু হাজিরা দেওয়ার জন্য আন্দলনে যেতে হয়।

এবিষয়ে কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবু তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ কর্মচারীদের করা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, নীতিমালা শুধু একটা দুটা বিষয়েই মূখ্য না। সেখানে অনেক বিষয়ের অসঙ্গতি আছে। বারবার প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসার পরেও কেন সমাধান হচ্ছে না এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে চাই প্রশাসন সেভাবে দাবি মেনে নিচ্ছে না।

জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়া অবৈধভাবে প্রায় সাড়ে তিনশ কর্মচারী নিয়োগ দেন। সেবছরেই মে মাসে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নুর উন নবী দায়িত্ব নেওয়ার পরেই উক্ত কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন।

পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পর্যায়ক্রমে এই পদগুলোর অনুমোদন দিলে তাদের স্থায়ীকরণ করা হয়। কিন্তু ৫৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারির সে সময়ের ৪৪ মাসের বেতন ভাতা বকেয়া রয়ে যায়। যা সাবেক উপাচার্য এ কে এম নুর উন নবী তাদের বকেয়া পরিশোধ করে যাননি। এদিকে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের জুন মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাদের বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহন করে।


সর্বশেষ সংবাদ