ছাত্রলীগের সুপারিশ
নিয়োগের শর্ত পূরণ না করেই ১৬ বছর ধরে চাকরিতে বেরোবি কর্মকর্তা
- বেরোবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩০ PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গ্রন্থাগারিক কর্মকর্তা মামদুদুর রহমানের আবেদনের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের শর্ত পূরণ না করার পরও গত ১৬ বছর দলীয় প্রভাবে চাকুরিতে বহাল তবিয়তে ছিলেন এ কর্মকর্তা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তার এ জালিয়াতির সংবাদ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলেও এখন পর্যন্ত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এছাড়াও তিনি নিয়মিত অফিস করেন না বলেও জানা যায়।
জানা যায়, মামদুদুর রহমানের চাকরির জন্য তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনসহ তিন ছাত্রলীগ নেতা তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মু আবদুল জলিল মিয়ার নিকট মামদুদকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন । এছাড়াও নিয়োগের শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও তৎকালীন উপাচার্য বরাবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুপারিশ থাকায় উপাচার্য চাপে পড়ে মামদুদকে নিয়োগ প্রধান করেন বলেও একাধিক কর্মকর্তা জানান।
সুপারিশ পত্রে দেখা যায়, গাইবান্ধা জেলা শাখার তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত সুপারিশ পত্রে, মামদুদুর রহমানের বাবা বদরুল উলা লাবিব গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে মামদুদকে বদরুল উলা লাবিবের প্রথম পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া আওয়ামী আমলে গাইবান্ধা জেলা জজ কোর্টের এপিপির দায়িত্ব পালন করেছেন তার বাবা লাবিব। সুপারিশ পত্রে আরো বলা হয়, মামদুদের পরিবারের সকল সদস্য জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী পরিবার হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও মামদুদুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তাদের সংগঠন স্বাধীনতা পরিষদের সদস্য এবং স্বাধীনতা পরিষদের হলুদ প্যানেল সদস্য হিসেবে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন।
এ কর্মকর্তার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২ মে, প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদের জন্য যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, তাতে বিজ্ঞপ্তির পদের ৩ নম্বর শর্তে দেখা যায়, লাইব্রেরি সায়েন্সে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক সম্মানসহ দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি ও সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কম্পিউটার পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কিন্তু মামদুদের আবেদনের সময় তার অভিজ্ঞতা ছিল ৪ বছর ৪ মাস ৩ দিন।সেই হিসেবে তার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার শর্তটি পূরণ না হওয়াতে এই পদে আবেদনেরই যোগ্যতা নেই । এর আগে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডকুমেন্টেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ১৭ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে। আবেদনের যোগ্যতা থাকা না সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করেই তিনি ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারে সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পান।
জানা যায়, আওয়ামী আমলে প্রভাব খাটিয়ে এবং তথ্য গোপন করে মামদুদ ২০১৭ সালের ২ জুলাই উপগ্রন্থাগারিক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ২ বছরের ব্যবধানে তথ্য গোপন করে আবারো অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক পদে পদোন্নতির চেষ্টা করেন। তবে বাছাই বোর্ডের নিকট যোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় পদোন্নতির সুপারিশ আটকে যায়। জুলাই অভুথ্যানের পর ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দিয়ে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের দলে ভিড়তে শুরু করেন এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় পদোন্নতি আটকে যাওয়ায় নিজেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার বলে সবার কাছে প্রচার করতে থাকেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, মামদুদুর রহমান বলেন, এমন টা তো না যে আমি চাকুরী পাই না। কারো হাতে পায়ে ধরে চাকুরি পাইছি। আমি তো বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরিরত ছিলাম। আমার যদি আবেদনের যোগ্যতাই না থাকে তাহলে আমি এডমিট কার্ড কীভাবে পেলাম।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সুপারিশের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি প্রথম ২০০৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি পাই। সেসময় তো বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। সেখান থেকে চাকুরি ছেড়ে বেগম রোকেয়ায় আসার জন্য কেনো আমি আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের সুপারিশ নিব।
গ্রন্থাগারের প্রধান ড. মো.মনিরুজ্জামান বলেন, পেপার পত্রিকা থেকে শুনে আসছি। এখন এ বিষয়ে তদন্তও হয়নি। কি সত্য কি মিথ্যা কীভাবে বলব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, উনি যেহেতু আগে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই আমার জানা ছিল না। বিষয়টির সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।