জবি রেজিস্ট্রারের ‘অসৌজন্যমূলক আচরণে’ ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৫৩ PM , আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৩ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রেজিস্ট্রার গিয়াসউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার অসৌজন্যমূলক ও অপমানজনক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (৩ আগস্ট) বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহিদ রফিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক পদে থাকা ব্যক্তিদের উচিত সর্বোচ্চ ধৈর্য, পেশাদারিত্ব ও সৌজন্যবোধ বজায় রাখা। কিন্তু রেজিস্ট্রার বারবার সেই সীমারেখা লঙ্ঘন করছেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’, ‘শিক্ষককে হেনস্তা মানি না, মানবো না’ স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, “রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কোনো যৌক্তিক দাবিতে গেলে আমাদের সঙ্গে বারবার দুর্ব্যবহার করা হয়। আমাদের বিভাগের একজন সম্মানিত শিক্ষককেও তিনি যেভাবে অপমান করেছেন, তা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার জন্য চরম অগ্রহণযোগ্য। একজন রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব কেবল ফাইল স্বাক্ষর নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ রক্ষা করাও তার কর্তব্য। কিন্তু বর্তমানে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘একক ক্ষমতার প্রতীক’।”
একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তিনি এখন ক্ষেপে যাওয়া ষাড়ের মতো আচরণ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ‘বদমেজাজী ও অযোগ্য’ কর্মকর্তাদের থাকার অধিকার নেই। এমন রূঢ় আচরণ শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকেই খাটো করে।”
ঘটনার মূল প্রেক্ষাপটে জানা গেছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু রায়হান সিদ্দিক ইউজিসি ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর নিতে যান। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, রেজিস্ট্রার বারবার তাকে অবজ্ঞা করেন, লাঞ্চের অজুহাতে কক্ষ ত্যাগ করেন এবং বলেন, আমি এখানে স্বাক্ষর করার জন্য বসে থাকি না।’
আরও পড়ুন: গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, শাহবাগে ছাত্রদলের সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক বলেন, ‘ইউজিসির নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাগজপত্র জমা দিতে না পারলে স্কলারশিপ বাতিল হওয়ার ঝুঁকি ছিল। আমি বারবার চেষ্টা করেছি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত সাড়া পাওয়ার, কিন্তু উনি যেভাবে কথা বলেছেন, যেভাবে পাশ কাটিয়েছেন, তাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত ও হতাশ হয়েছি। এটি একজন শিক্ষকের সঙ্গে নয়, একজন সহকর্মীর সঙ্গেও এমন ব্যবহার হওয়ার কথা নয়।’
এটাই প্রথম নয়। এর আগেও রেজিস্ট্রার গিয়াসউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, প্রশ্ন করায় রুম থেকে বের করে দেওয়া এবং মন্তব্য না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সংবাদ সংগ্রহের প্রয়োজনে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে গেলে তিনি অশোভনভাবে প্রতিক্রিয়া জানান ও কথা বলার আগ্রহ দেখান না।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, অপমানিত শিক্ষককে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করতে এবং রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন।
একাধিক শিক্ষার্থী মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাস্তবতায়, যেখানে জুলাই-পরবর্তী ছাত্র-আন্দোলনের পটভূমি এখনো সক্রিয়।