‘ফোন কেড়ে নিয়ে ভুল করিনি’—সাংবাদিক হেনস্তার পর বৈষম্যবিরোধী নেতা

শাহরিয়ার সোহাগ
শাহরিয়ার সোহাগ  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) চলছে বাজেট বৈষম্য আন্দোলন। চলমান আন্দোলনের মধ্যে নেতৃত্ব সংকট ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন চরম আকার ধারন করেছে। এরই মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা শাহরিয়ার সোহাগ। 

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঘটনা ঘটে। শাহরিয়ার সোহাগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নেতা এবং বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল আন্দোলনকারীদের। স্মারকলিপি প্রদানের প্রস্তুতি চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতা শাহরিয়ার সোহাগ ও অন্যান্য সমন্বয়কারীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির ভিডিও ধারণ করছিলেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আবু সাঈদ। ঠিক সেই সময় সোহাগ সাংবাদিক আবু সাঈদের সঙ্গে অশোভন ও অপেশাদার আচরণ করেন এবং জোরপূর্বক তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কেড়ে নেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অনেকজন জাতির পিতা রয়েছে: নাহিদ ইসলাম

শুধু এই ঘটনাই নয়, শাহরিয়ার সোহাগের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার সরাসরি সাংবাদিকের ওপর হস্তক্ষেপ করায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল এই ঘটনাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

এর আগে সোমবার (২৮ জুলাই) শিক্ষার্থীরা বাজেট বৈষম্যের প্রতিবাদে রংপুর নগরীর মডার্ণ মোড় অবরোধ করেন এবং পরে তা প্রত্যাহার করে দুই দফা দাবি পেশ করেন আন্দোলনকারীরা। আজকের কর্মসূচি ছিল সেই ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ। কিন্তু আন্দোলনের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনায় মূল ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা জনান, সাংবাদিকের সঙ্গে এমন আচরণ শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, এটি মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য সরাসরি হুমকি।  দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তারা বলেন, এর আগেও সোহাগ মুখতার এলাহী হলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত অভিযান পরিচালনা করতে গেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাতজোর করে ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যান। এর আগেও সে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। শুধু তাই নয়, সে বাইরে থেকে রাজনৈতিক কিছু নেতা নিয়ে এসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আহমদুল হক আলবি বলেন, ‘নেতাদের দ্বন্দ্বে আন্দোলন কার্যত ভণ্ডুল হয়ে যায়। আমরা আন্দোলনের জন্য জড়ো হলেও তারা নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক আবু সাঈদ, তখনই সোহাগ মোবাইল কেড়ে নেন।’

আরও পড়ুন: সরকারি পলিটেকনিকের ভর্তি পরীক্ষা ২৯ আগস্ট

এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু সাঈদ বলেন, ‘আজকের কর্মসূচি ছিল স্মারকলিপি প্রদান। সময়মতো আমি উপস্থিত হয়ে দেখি, চত্বরে কেউ নেই। মূল ফটকের দিকে এগিয়ে গেলে কয়েকজন সমন্বয়ককে প্রস্তুতি নিতে দেখি। সেখানে অপেক্ষা করতে থাকি। হঠাৎ দেখি সমন্বয়ক সোহাগ ও জয় নিজেদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। আমি ভিডিও ধারন করতেই সোহাগ ক্ষিপ্ত হয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় মোবাইল ফেরত পাই।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘আমি ফোন কেড়ে নিয়ে কোনো ভুল করিনি। তবে সরি বলেছি, কারণ তখন মাথা গরম ছিল। আবু সাঈদকে বলেছি, ‘বন্ধু, সিচুয়েশনটা বুঝতে পারতেছ?’ ভিডিও বন্ধ করার জন্যই ফোন নিয়েছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকরা এর আগে ফ্যাসিস্ট দের আক্রমণের শিকার হয়। আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরা যদি আবারও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয় তাহলে এটা মেনে নেওয়ার মতো না।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence