বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বাজেট স্বল্পতা, আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
- ববি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০১:০৬ PM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০৭:২৬ PM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকে দক্ষিণের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের অগ্রগতি নেই। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ, অবকাঠামো ও সামগ্রীর অভাব এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা খাত। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ না থাকায় তাদের গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকলেও কোনো রকম বাজেট নেই শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য। এ কারণে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে আগ্রহ করেন না। হাতেগোনা যে কয়েকজন শিক্ষার্থী মাস্টার্সে থিসিস নেন, অর্থাভাবে তা-ও করতে আশা হারিয়ে ফেলেন অনেকে। ফলে মানসম্মত থিসিস সম্পন্ন করতে পারেন না তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেগুলার শিক্ষকদের গবেষণার জন্য এক কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। এ ছাড়া পিএইচডি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৩০ লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পিএইচডির সুযোগ না থাকায় এই অর্থ অব্যবহৃতই থেকে যায়। তবে রেগুলার শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট বা থিসিসের কাজ করার সময় প্রায়ই আর্থিক সংকটে পড়েন। নিজেদের অর্থায়নে গবেষণা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে নিজের অর্থায়নে গবেষণা শুরু করলেও অর্থায়নের অভাবে তাদের কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, ডেটা বিশ্লেষণ, সার্ভে পরিচালনা বা জার্নালে প্রকাশনার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব খরচ করতে হয়, যা তাদের পক্ষে বহন করা কঠিন।
আরও পড়ুন : বিশেষ বিসিএসের জন্য বিধিমালা সংশোধন, প্রজ্ঞাপন জারি
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত কার্বন ফেস্টে প্রথম হন মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম। গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গবেষণা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা আমাদের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক সময় গবেষণার কাজে গিয়ে আমরা আর্থিক সংকটে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করে, তবে আমাদের জন্য গবেষণার কাজটি অনেক সহজ হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত করতে হলে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কালচার তৈরি করার জন্য তার প্রধান স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করতে হয়, তাদের আর্থিক প্রেষণা দিতে হবে। শুধু শিক্ষকদের গবেষণায় নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই পুরোপুরি গবেষণা কালচার তৈরি করা সম্ভব নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. রহিমা নাসরিন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা গবেষণার জন্য কোনো বাজেট পান না। শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিলে এবং তাদের সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অনেক এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নাই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য একটি বাজেট থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও বাজেট বরাদ্দ হয়নি। আমরা যারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গবেষণা করি, অনেক সময় দেখা যায় এই অর্থগুলো আমাদের জোগাড় করতে হয়, যেটা খুবই ডিফিকাল্ট। আমরা আশা করছি বর্তমান উপাচার্য এ বিষয়ে সুনজর দেবেন।
আরও পড়ুন : কুয়েটের ২ শিক্ষার্থীর ওপর দুর্বৃত্তের হামলা— এ কাজ গুপ্ত সংগঠনের, বলছে ছাত্রদল
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রয় বলেন, ‘আমাদের এখানে গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নেই। এতে গবেষণা খাত ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যারা থিসিস করে, এনএসটি ফান্ড থেকে কিছুটা সাহায্য পায় তারা। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের যদি সহায়তা করা যায়, তাহলে তারা বেশ উপকৃত হবে।’ এ বিষয়ে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং সম্প্রসারণ প্রধান ড. সোনিয়া খান সনি বলেন, ‘এটা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো বাজেট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমরা কথা বলব কীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম এই বিষয়ে বলেন, ‘গবেষণার মান যেন বাড়ানো যায়, সে জন্য গবেষণার সার্বিক বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এবং আমাদের সেন্ট্রাল ল্যাবে যেসব যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে খুব শিগগিরই বলে জানান উপাচার্য ।