ছাত্রলীগের তিন বছর আগের বিরোধে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে মারধর
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ০৯:১১ AM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৫, ০২:২১ PM
ছাত্রলীগের তিন বছর আগে বিরোধের জেরে হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এতে তার কানের পর্দা ফেটে গেছে বলে জানিয়েছেন। আহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কামরুল ইসলাম শিশির। শনিবার (১৭ মে) বিদ্রোহী হলের ৫১৪ নম্বর রুমে মারধরের শিকার হন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশিরের ওপর হামলা চালান চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী নাসিফ হায়দার আকুল, সাজ্জাদ হোসেন রাব্বী, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সাদেকুর রহমান এবং অর্থনীতি বিভাগের তোফায়েল পুনম। এলোপাতাড়ি চড় এবং কাঠ দিয়ে আঘাত করা হয় তাকে। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে কানের পর্দা ফেটে গেছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
জানা গেছে, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুদ্বীপ এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সভাপতি পদপ্রার্থী মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারী আকুল এবং ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রিয়েল সরকারের কর্মীরা। সংঘর্ষে রিয়েলের কর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ ফয়সাল এবং আকুল গুরুতর আহত হন।
পরবর্তীতে রিয়েল সরকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে হলের সিট দখল এবং নানাভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করেন কর্মীরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পূর্বের ঘটনার জেরে রিয়েল সরকারের একেকজন কর্মীকে দফায় দফায় লাঞ্ছিত করতে থাকেন আকুল। এর ধারাবাহিকতায় রিয়েলের কর্মী কামরুল ইসলাম শিশিরকে একাধিকবার শাসানোর পর রুমে এসে মারধরের এ ঘটনা ঘটল।
আহত শিক্ষার্থী কামরুল হাসান শিশির বলেন, ‘দুপুরে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকুল, রাব্বীসহ ৪-৫ জন রুমে এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি ফোন দিতে রাজি না হওয়ায় কাঠ দিয়ে আমার হাতে সজোরে আঘাত করে। কানের কাছে কয়েকবার চড়-থাপ্পড় মারে। এছাড়াও আমাকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেয়।’
ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং পূর্ব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আকুলের ওপর পূর্বের কোনো হামলার ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না। সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর হলে থাকতে চাইলে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতেই হতো, এ কারণে যতটুকু রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে হতো ততোটুকই করতাম, এর বেশি না। আমার ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে পদে নেই, এমনকি ছাত্রলীগের কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্তও জমা দিইনি।’
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি
শিশিরের ওপর হামলার ঘটনায় আকুলের সহযোগী সাদেকুর রহমান নিজেও ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে জানা গেছে। বাবু-রাকিব কমিটিতে বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে সিট দখল করে রাখায় গত ৯ মার্চ তাকে হল থেকে বের করে দেয় হল প্রশাসন। তবে ছাত্রদলের পরিচয়ে আবারও হলে থাকতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলার বিষয়ে আকুল বলেন, ‘তিন বছর আগের ঘটনায় হামলাকারীরা আমার সঙ্গে দেখা করেছে। ছোট ভাই হিসেবে আমি সবার সঙ্গে বিষয়টি ক্লিয়ার করছি। তবে শিশিরকে আমি কয়েকবার ডাকছি, কিন্তু ও দেখা করেনি। বরং আরেক বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা রহিমকে দিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর শিশিরের বডি ল্যাংগুয়েজও অন্যরকম ছিল। এজন্যই আজকের ঘটনাটি ঘটেছে।’
এ বিষয়ে বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মারধরের ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেব।’