ঢাবিতে জুলাইয়ে লাঠি হাতে ছাত্রলীগের মিছিলে, জবিতে বিভাগীয় ব্যবস্থাপনায় দিচ্ছেন পরীক্ষা

ঢাবিতে ছাত্রলীগের মিছিলে লাঠি হাতে অংশ নিতে দেখা যায় জবির ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান আকাশকে
ঢাবিতে ছাত্রলীগের মিছিলে লাঠি হাতে অংশ নিতে দেখা যায় জবির ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান আকাশকে  © সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের মার্কেটিং বিভাগ ইউনিটের সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ গোপনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ ব্যবস্থায় তার জন্য আলাদাভাবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে বিভাগীয় কমিটি। অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় এমন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

মাহমুদুল হাসান আকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। একটি ছবিতে তাকে লাঠি হাতে মিছিলের প্রথম সারিতে দেখা যায়। 

এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিভাগের ছাত্রলীগ সভাপতি আকাশ ৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ক্লাস করছেন, পরীক্ষা দিচ্ছেন। 

শেখ হাসিনা না পালালে তারাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা এখনো আমাদের সঙ্গে ক্লাস করছে, ওঠাবসা করছে। এটা বিপজ্জনক ও লজ্জার। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’

বিভাগে ক্লাস না করলেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন স্বীকার করে ছাত্রলীগের মার্কেটিং বিভাগ ইউনিটের সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ বলেন, ‘আমি ক্ষমা চেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলাম। পরে আমাকে শাস্তি দিয়েছে। ছয় মাস ক্লাস করিনি। আমাকে সাধারণ ক্ষমা করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। বিভাগের সবাই আমাকে ক্ষমা করে বলেছে, পরীক্ষা দিতে দেওয়া যায়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার সদস্য সচিব সিফাত হাসান সাকিব বলেন, ‘আমি এবং আমার সাথীরা গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। সেদিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর যে বর্বর হামলা চালিয়েছে, তা কোনোদিন ভুলবো না। আমার চারজন সহযোদ্ধা তাদের হামলায় এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে কেন প্রশাসন প্রশ্রয় দিচ্ছে? তাদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে জবি প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করছে।’ 

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি অপকর্ম বা অপরাধ করে, তাহলে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কারণ অপরাধী যদি শাস্তি না পায়, তাহলে সে ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। জুলাই বিপ্লবে যারা অপকর্মে লিপ্ত ছিল বা ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে সেটা ‘মব জাস্টিস’ নয়, আইনানুগ বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।

আরো পড়ুন: ১০ বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন জেলখানায় পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হওয়া সেই রাবি শিক্ষার্থী

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার আছেন জানিয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘তারা এখনও আড়ালে-আবডালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে বারবার আহবান জানাচ্ছি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদি প্রশাসন অবহেলা করতে থাকে, তাহলে আমরাই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তখন প্রশাসন কিছু বলতে পারবে না।’

এটি একার সিদ্ধান্ত নয়, অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত দাবি করে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইকরামুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আকাশ ও তার কয়েকজন বন্ধু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে অসম্মতি জানায়। পরবর্তীতে তারা বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করে এবং তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। 

অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে তাদের আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত। তারা জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই তাদের সুযোগ দিতাম না।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence