ইবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের সমালোচনার ঝড়
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬ AM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৮ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহীত একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সম্প্রতি বিকাল ৪ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনার প্রতিবাদে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কিছুদিন পরপরই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নেওয়া’র অজুহাত মানতে নারাজ তারা।
জানা যায়, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে যেকোনো অনুষ্ঠান পালনের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের অবগতির জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে যে কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতির জন্য ছাত্র-উপদেষ্টা/প্রক্টর বরাবর আবেদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন কেউ অংশ গ্রহণ করবেনা মর্মে নিশ্চয়তা প্রদানের শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে বিকাল ৪ ঘটিকার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার এবং সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি থাকাকালীন সময়ে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে শর্তারোপ করা হয়। আর এতেই চটেছেন শিক্ষার্থীরা।
ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত। আমার ক্যাম্পাস আমার অধিকার। আমার মাটিতে আমি কী করছি তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন আমার আয়োজনের নিরাপত্তা দিতে না পারলে লিখিত দিবে ঠিক কোন যুক্তিতে নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। যদি বারবার ব্যর্থ হয় তাহলে পদত্যাগের ব্যবস্থাও আছে।
শেখ মামুন হোসেন নামের অন্য শিক্ষার্থী বলেন, সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করার পর একজন শিক্ষার্থী কীভাবে ওখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে যদি সেটা চারটাই শেষ হয়ে যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন সুস্থ মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। ক্যাম্পাসে অজস্র সমস্যার সমাধান না করে প্রশাসন আছে এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই দেখা উচিত, প্রাইমারি বা হাইস্কুল হিসেবে নয়।
মির্জা শাহরিয়ার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কয়দিন পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। আজকে হল বন্ধ, কাল দোকানপাট বন্ধ, তারপরের দিন বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠান বন্ধের মতো নির্দেশনা দিয়ে প্রশাসন আসলে কী বার্তা দিতে চায় তা জানি না। এই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠিক কোন জায়গায় দেখতে চাচ্ছে সেটা শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। অবশ্যই প্রশাসনের কোন সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা আছে নইলে কয়েকদিন পরপর এরকম শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, মেধা বিকশিত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে মেধাকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দেওয়া। ইবি প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া। বিশৃঙ্খলতা এড়াতে বা অধিকতর নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিতেই পারে কিন্তু মাথা ব্যথা জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ গুলো বন্ধের দিনে বা বিকালে হওয়াই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শহিদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিকতা প্রদানের নোটিশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’ বলে উল্লেখ করা হলে সমালোচনার মুখে তা সংশোধন করে হল প্রশাসন। পরবর্তীতে শীতকালীন ছুটি শুরু হওয়ার আগ দিয়ে সান্ধ্য আইন জারি করে মেয়েদের মাগরিবের নামাজের ১৫ মিনিট এবং ছেলেদের হল রাত ১১ টায় বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আরেক দফা সমালোচনার শিকার হয় ইবি প্রশাসন। সমালোচনার মুখে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও কিছুদিন পরে রাত ১২টায় দোকানপাট বন্ধের অলিখিত নির্দেশনা দিয়েও সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।