নজরুল কলেজে শৌচাগারের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে নারী শিক্ষার্থীরা
- আব্দুল্লাহ খান, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৬ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪ PM
অপরিচ্ছন্নতা, পানির সংকট, পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেটের অভাব এসব সমস্যা যেন প্রতিদিনই ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও, শৌচাগারের নাজুক পরিস্থিতির কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের এইরূপ চিত্র। স্বনামধন্য এই কলেজটিতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত কোন শৌচাগার। শৌচাগার থাকলেও বেশিরভাগই অপরিচ্ছন্ন, নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। কোনোটি আবার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন হয়ে আছে। ফলে মেয়েদের নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের পিরিয়ড সময়কালে আরও বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
‘ক্লাসের মধ্যে হঠাৎ প্রয়োজন হলে কোথায় যাবো? টয়লেটের অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রয়োজন হলেও যাওয়ার ইচ্ছে হয় না। প্রায় সবগুলো টয়লেটের দরজা নষ্ট , ভেতরে পানি থাকেনা, আলো নেই, দুর্গন্ধে দাঁড়ানোই দায়। ফলে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে’- বলছিলেন বাংলা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ প্রশাসন বহুবার বিষয়টি জানলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার না থাকায় দীর্ঘ সময় পানি পান না করেই থাকতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কেন এই অব্যবস্থাপনা?
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সানজিদা বলেন, ‘ক্লাসের ফাঁকে বাথরুমে গিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছিলাম। নোংরা আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। দুর্গন্ধে বমি আসছিল। বিদ্যুতের বাল্ব শেষ কবে লাগানো হয়েছে, কেউ বলতে পারবে না। খুব জরুরি হওয়ায় দরজাটা কোনো রকমে টেনেটুনে লাগাতেই, টয়লেটের ভেতরটায় নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যেই দ্রুত বাথরুম সেরে বের হতেই দেখি বেশ কয়েকজন ছাত্র ঢুকছে। পরক্ষণেই বুঝতে পারি এটি কমন বাথরুম।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মিম বলেন ‘মেয়েদের জন্য আলাদা একটা কমন রুম থাকলেও, সেটা অনেক সময় বন্ধ থাকে। আর ওটা অন্য বিল্ডিং এ হওয়াই বাধ্য হয়ে কমন ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয়। তিনি খুব আক্ষেপ করে বলেন, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার জন্য এসেছি, মৌলিক চাহিদার জন্যও যদি লড়াই করতে হয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক।’
নারী শিক্ষার্থীদের এই মৌলিক সমস্যা এখনও রয়ে গেছে অবহেলিত। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে পানি পান কমিয়ে দেয় বা ক্লাস চলাকালীন অস্বস্তিতে থাকে, যা তাদের পড়াশোনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, নোবিপ্রবি শিক্ষক বরখাস্ত
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, কলেজ প্রশাসনের উচিত খুব তাড়াতাড়ি নারী শিক্ষার্থীবান্ধব শৌচাগারের ব্যবস্থা নেওয়া। যথাযথ উদ্যোগ না নিলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে কলেজটির অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস কে জানান, ‘এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারি কাজগুলো একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হয়। তবে খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশাবাদী।’