কুবিতে ভিত্তিপ্রস্তরের ‘বলি’ দুর্লভ বৃক্ষ ক্যাসিয়া জাভানিকা

দুর্লভ প্রকৃতির বৃক্ষ ক্যাসিয়া জাভানিকা বা লাল সোনাইল
দুর্লভ প্রকৃতির বৃক্ষ ক্যাসিয়া জাভানিকা বা লাল সোনাইল  © টিডিসি সম্পাদিত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রতিষ্ঠাকালীন ভিত্তিপ্রস্তর পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে সেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের বলি হতে যাচ্ছে দুর্লভ প্রকৃতির বৃক্ষ ক্যাসিয়া জাভানিকা বা লাল সোনাইল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রশাসন বরাবর চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। 

অভয়ারণ্যের সহ-সভাপতি রঞ্জন ভৌমিক, বিএনসিসির প্লাটুনের ক্যাডেট আন্ডার অফিসার মো. সামিন বখশ সাদী ও সাইফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিরল প্রজাতির লাল সোনাইল গাছ স্থানান্তর না করে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিকল্প পথ অনুসরণের দাবি করেন।

জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম সম্বলিত ভিত্তিপ্রস্তরটি ভেঙে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিভিন্ন সময়ে ভিত্তিপ্রস্তর পুনঃস্থাপনের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলেও তাতে সায় দেয়নি প্রশাসন। তবে আওয়ামী সরকার পতনের পর ফের পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথের সামনে লাল সোনাইল গাছ থেকে CoU চত্বরের বরাবর সিঁড়ি তৈরি করে এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এতে লাল সোনাইল গাছের কয়েকটি ডাল কেটে ফেলা হয়েছে এবং গাছটি স্থানান্তর করতে চারপাশের মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে গাছের গোঁড়ায় আবার মাটি দিয়ে ভরা করা হয়েছে।  

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি প্লাটুনের ক্যাডেট আন্ডার অফিসার মো. সামিন বখশ সাদী জানান, ২০২২ সালে কুবি বিএনসিসি প্লাটুনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন রাস্তার দু’পাশে বিরল প্রজাতির লাল সোনাইল গাছের ২০টি চারা রোপণ করা হয়। দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফুল ফোটে, যা শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধ করে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে এটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই গাছগুলো স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে ক্যাডেট আন্ডার অফিসার মো. সামিন বখশ সাদী বলেন, একটি গাছ বেড়ে ওঠার পেছনে অনেক পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়। আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, গাছগুলো স্থানান্তর না করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিকল্প পন্থা গ্রহণ করুন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাল সোনাইল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া জাভানিকা (Cassia Javanica)। বাংলাদেশে এই গাছ খুব একটা সহজলভ্য নয়। এটি শুধু শোভাবর্ধনের জন্য নয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। এর ঔষধি গুণাবলি এবং বিরলতা এই গাছের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে দাবি পরিবেশ প্রেমীদের।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নিয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, আমি চেয়েছি বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসকে একটু একটু করে সাজিয়ে তুলতে। গাছগুলোকে পরিকল্পনা মাফিক লাগানো হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে জায়গা থেকে এই ধরনের স্থাপত্যিক কাঠামো তৈরি করার ক্ষেত্রে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে এটা বানানো দেখতেও অসুন্দর লাগছে। গাছটিকে বাঁচানো যাবে কি না আমি জানি না। যেহেতু সুযোগ ছিল আরেকটু বা পাশ দিয়ে করা যায়, আমার মনে হয় আরেকটু বিবেচনা করা উচিত। তাছাড়া গাছটি দুর্লভ প্রকৃতির। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নার্সারি থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান নির্বাহী এস. এম. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটার কমিটি আছে। কমিটি কাজ করছে। 

প্রতিষ্ঠাকালীন ভিত্তিপ্রস্তর পুনঃস্থাপন প্রকল্প কমিটির আহবায়ক ও ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এমএম. শরিফুল করিম বলেন, এটা আপাতত স্থগিত আছে। কালকে সামনাসামনি গিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমরা বলেছিলাম এটা রিপ্লেস করে সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে লাগাব।


সর্বশেষ সংবাদ