ঢাকা কলেজে মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দ, তবুও শঙ্কা কাটেনি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা কলেজের একটি হল (আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস)
ঢাকা কলেজের একটি হল (আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস)  © সম্পাদিত

মেধা ও অর্থিক অসচ্ছলতাকে প্রধান্য দিয়ে স্ব স্ব বিভাগের ভিত্তিতে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দে সুষ্ঠুভাবে নীতিমালা প্রতিপালন এবং পরবর্তীতে ছাত্রাবাসের পরিবেশ পূর্বের ন্যায় ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নীতি-বর্হিভূতভাবে পরিচালিত হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়াত আহমেদ তার শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। সাফায়েত পরিবারের সাথে চট্টগ্রামের মিরসরাই এ একটি প্রত্যন্ত গ্রামে থাকতেন। ২০২২ সালে তিনি ঢাকা কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিভাগে ভর্তি হন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার পরেও বাবা-মাকে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস সুবিধার কথা বুঝিয়ে ঢাকায় আসেন।

ঢাকায় এসে শিক্ষকদের সাথে ছাত্রাবাসে উঠার বিষয়ে কথা বললেও শিক্ষকদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। পরে জানতে পারেন ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ কলেজ প্রশাসনের হাতে নেই। যোগাযোগ করতে হবে হলে থাকা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে। সাফায়েত ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা তাকে হলে ওঠার বিষয়ে কয়েকটি শর্ত দেন। শর্তগুলো মধ্যে প্রথমত, ছাত্রলীগের কর্মী হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের মিছিল, মিটিং, সভাগুলো করতে হবে এবং হলে তাদের জারিকৃত নিয়ম মানতে হবে। শর্তগুলো একটিও পছন্দ না হলেও অর্থ সংকটের কারণে মেনে নিতে বাধ্য হন এবং হলে উঠে যান। ছাত্রাবাসে ওঠার পর থাকতে হয়েছে গণরুমে। মুখোমুখি হতে হয়েছে গেস্ট রুম এবং র‍্যাগিংয়ের।

এছাড়াও রাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ববৃন্দের মাদক আড্ডার কারণে রুমে ঢুকতে পারতেন না; ফলে বাহিরে রাত কাটাতেন। এমনকি ছাত্রলীগের কথা না শুনলে হল থেকে বাহির করে দিত। ক্যান্টিন চাঁদাবাজির কারণে খেতে হয়েছে নিম্নমানের খাবার। এই চিত্র গত ১৫ বছরের বলা যায়। এমনটিই বলেছেন সাফায়াত।

তিনি আরও বলেন, '৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শিক্ষা অঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বলা চলে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জোর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি না থাকার। ফলে ছাত্রবাসগুলোতে ওঠার জন্য নতুন নিয়ম প্রণয়ন করা হয়। নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম মেধার ভিত্তিতে সিট প্রদান। যাদের সিজিপিএ ভালো এবং পারিবারিকভাবে অসচ্ছল তারা ছাত্রাবাসে উঠতে পারবে। এই নিয়মে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। তবে এই নিয়ম কত দিন থাকবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আছে শঙ্কা। তারা মনে করছে এই নিয়মে বেশিদিন চলবে না হল। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ছাত্রদল হলকে পূর্ব অবস্থায় নিয়ে যাবে।'

স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, 'বর্তমান যে পরিস্থিতি, ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা যে ছাত্রাবাস নীতিমালা করছে এটিতে আমি অন্তত্য খুশি ও আনন্দিত। বিগত দিন গুলোতে  ছাত্রলীগ নিজের মত নিয়ম করে একক আধিপত্য বিস্তার করছিল ছাত্রাবাসে। তারা নির্যাতন করত এমনকি পড়াশোনার নূন্যতম পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি।'

ছাত্রাবাস নতুন ব্যস্থাপনা আবার পূর্বে অবস্থায় ফিরে যেতে পারে শিক্ষার্থীদের এমন আশঙ্কা নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রফিকুল আলম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যত দিন আছে ততদিন ছাত্রাবাসে নতুন সিস্টেম ভাঙ্গা সম্ভব হবে না। এটি তার ব্যক্তিগত মতামত এটি উল্লেখ করে বলেন পরবর্তী সরকার আসলে কি হয় তা বলা যাচ্ছে না তবে এক্ষেত্রে কিছু হলে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে এবং কলেজ প্রশাসনকেরও হস্তক্ষেপ থাকতে হবে। 

উল্লেখ্য, ঢাকা কলেজে ৮ ছাত্রাবাস আছে, এর মধ্যে বিজয় ২৪ হল ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এবং পশ্চিম ছাত্রাবাস সনাতন ধর্মাবলম্বী জন্য বরাদ্দ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ