কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

হলে ফাটল: প্রশাসন বলছে ঝুঁকিমুক্ত, শঙ্কা কাটছে না শিক্ষার্থীদের

ভূমিকম্পের ফলে কুবির একাধিক হলে ফাটল দেখা দিয়েছে
ভূমিকম্পের ফলে কুবির একাধিক হলে ফাটল দেখা দিয়েছে  © ফাইল ছবি

ভূমিকম্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুইটি হলের বিভিন্ন সংযোগস্থলে ফাটল দেখা দিয়েছে। তীব্র কম্পনে হলগুলো কাঁপতে শুরু করলে শিক্ষার্থীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে হলের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখতে পান তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্পের পর গতকাল রবিবার হলগুলো পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। 

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলরা দাবি করেছেন, ভূমিকম্পে হলগুলোর মূল ভবনে সেরকম কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। ভূকম্পনের ফলের কয়েকটি হলের সংযোগস্থলে চিড় ধরেছে। হলগুলো নির্মাণের সময় একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগস্থল পলেস্তারা দেওয়া ছিল। মূলত সেটাতেই চিড় ধরেছে। মূল ভবনগুলোর কলাম ও বীমের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমন ফাটলে ভয়ের কোনো কারণ নেই।

প্রকৌশলীরা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে হলের কয়েকটি দেয়ালে সামান্য ক্ষতি ছাড়া কোনো কাঠামোগত ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। -উপাচার্য, কুবি

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার দক্ষিণ পাশের ব্লকের ৫০৪ নম্বর কক্ষের সামনের করিডরের মেঝের দুটি টাইলস উঠে গেছে। তবে ওই ব্লকের এক শিক্ষার্থী জানান, এই টাইলস আগে থেকেই একটু উঠানো ছিল। ভূমিকম্পের ফলে টাইলস আরেকটু ওপরে উঠে গেছে। এছাড়াও হলের কয়েকটি দেয়ালে যে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলোতে আগে থেকেই ছিল। তবে ফাটলের মাত্রা আগের চেয়ে একটু বেশি বেড়েছে।

ভূমিকম্প পরবর্তীতে কুবি হল পরিদর্শনে উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ভবনগুলো বানানোর সময় রড ব্যবহার করা হয়েছে। যেটাকে আরসিসি স্ট্রাকচার বলা হয়। আরসিসি স্ট্রাকচার মানে ভূমিকম্প সহনীয় স্ট্রাকচার। অর্থাৎ ভূমিকম্প হলে তা (রড) ঝাঁকুনিকে সহ্য করবে। যেকোনো ধরনের ঝাঁকি নিতে সক্ষম এই ভবনগুলো। এজন্য এগুলোকে বলে আরসিসি স্ট্রাকচার বিল্ডিং। আরসিসি স্ট্রাকচার বিল্ডিংয়ের মানে হলো এটি হুট করে ভেঙে পড়বে না। এটা দীর্ঘদিন ওয়ার্নিং দেবে। ধীরে ধীরে কলাম-বীম ফাটল দেখা দেবে। অথবা অন্য কোনোভাবে এটি ওয়ার্নিং দেবে।

তিনি জানান, ভবনগুলোর নিরাপদ রাখার জন্য একটি থেকে অন্যটির মাঝে ফাঁক রাখা হয়। যাতে করে এ ধরনের ঝাঁকুনিতে অন্যটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়। কিন্তু অনেক সময় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সংযোগস্থলগুলোতে কাজ করার সময় পলেস্তারা দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এটা করা নিয়ম না। কুবির হলগুলোতে সেটাই হয়েছে। এ পলেস্তারাগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ফাটল ধরা তিন হলের অবস্থা যাচাই-বাছাই হচ্ছে: কুবি ভিসি

এর আগে গত শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৬। এ ভূমিকম্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হলে ফাটল দেখা দেয়।

এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক এস. এম. শহিদুল হাসান। তিনি বলেন, আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। ভূমিকম্পের ফলে মূল ভবনের স্টাকচারে কোনো ক্ষতি হয়নি। কলাম ও বীমেও এখন পর্যন্ত কোনো ফাটল পাওয়া যায়নি।

তবে হলগুলোতে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মাঝে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, হলটির আশেপাশে ভারী যানবাহন চলাচল করলে আগে থেকেই হলের কক্ষগুলো কেঁপে উঠতো। এ ভূমিকম্পের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে কিনা, সেটাই আমাদের ভাবাচ্ছে।

ভূমিকম্পে কুবির তিন হলে ফাটল

ভারী যানবাহনের ঝাঁকুনি কোনো বিপদ সংকেত কিনা জানতে চাইলে প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল হাসান বলেন, যখন ভারী গাড়ি চলাচল করে তখন তার যে ঝাঁকুনি তৈরি হয় সেটি ট্রান্সফার হয়। যখন গাড়ি যায় তখন এটার ঝাঁকুনি ট্রান্সফার হয়ে ভবনে আসে। তবে এতেও মূল কাঠামোতে কোনো ক্ষতি হয় না। যখন কোনো ব্রিজ দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল করে তখনও দেখা যায় একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঝাঁকুনি অনূভুত। সুতরাং এটি নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

ভবনগুলো বানানোর সময় রড ব্যবহার করা হয়েছে। যেটাকে আরসিসি স্ট্রাকচার বলা হয়। আরসিসি স্ট্রাকচার মানে ভূমিকম্প সহনীয় স্ট্রাকচার। -এস. এম. শহিদুল হাসান, তত্ত্বাবধায়ক, প্রকৌশল দপ্তর

এদিকে, ভূমিকম্পের একদিন পর চিড় ধরা ভবনগুলো পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। এসময় তিনি ফাটল ধরা হলগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

কুবি উপাচার্য বলেন, প্রকৌশলীরা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে হলের কয়েকটি দেয়ালে সামান্য ক্ষতি ছাড়া কোনো কাঠামোগত ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ভবনগুলোর কাঠামোর প্রকৃত অবস্থা অধিকতর যাচাই করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence